নাবালক/নাবালিকা গ্রহীতার নামে জমি ক্রয়
নাবালক/নাবালিকা গ্রহীতার নামে জমি ক্রয় করার জন্য দলিলে কি লিখতে হয়??
আমরা অনেকেই আমাদের নাবালক সন্তানাদিদের নামে জমি ক্রয় করতে চাই ৷ কিন্তু এটা নিয়ে আবার অনেক দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই, বিষয়টা কতটুকু সঠিক?
হ্যাঁ- আপনি অবশ্যই আপনার নাবালক সন্তানাদিদের নামে জমি ক্রয় করতে পারবেন
এক্ষেত্রে দলিলে নাবালক/ নাবালিকার পক্ষে একজন স্বাভাবিক অভিভাবক নিযুক্ত হতে হবে,
একজন নাবালকের নামে জমি ক্রয় করার জন্য আইনতভাবে কোন বিধি নিষেধ নেই ৷ কোন অভিভাবক যদি তার নাবালক সন্তানের নামে জমি ক্রয় করেন সেটা আইনত বৈধ বলেই বিবেচিত হবে ৷ একজন নাবালক জমি হস্তান্তরের গ্রহিতা হতে পারে ৷ কিন্তু একজন নাবালক জমি হস্তান্তর দাতা হতে পারে না ৷ তাকে দাতা হবার জন্য আদালত কর্তৃক অনুমোদিত অভিভাবক নিযুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর দাতা হতে পারবে ৷
কোনো ব্যক্তি যদি নাবালকের বরাবর জমি হস্তান্তর করে নাবালকের অজুহাতে সেটা কখনোই অস্বীকৃতি করতে পারবেন না ৷
অভিভাবক নিযুক্তি
বাবা, মা, পিতামহ (দাদা), সহদোর ভ্রাতা (আপন ভাই) স্বাভাবিক অভিভাবক নিযুক্ত হয়ে দলিল নিবন্ধন/ দলিল রেজিস্ট্রী কার্যক্রম করা যাবে ৷
এজন্য দলিলে নাবালক/ নাবালিকার জন্ম নিবন্ধন সনদ সহ দলিলে ৩নং গ্রহীতার কলামে নাম, জন্ম তারিখ, জন্ম নিবন্ধন সনদ নম্বর সহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা সহ গ্রহীতার কলামটি লেখা থাকবে
এবং দলিলের ৫নং কলাম- ক্ষমতাপ্রাপ্ত এ্যাটর্ণি/প্রতিনিধি/অভিভাবকের নাম, ঠিকানা ও বিবরণঃ- এর জায়গায় লেখা হবে
(অভিভাবক যদি পিতা হয় সেক্ষেত্রে)
>>নাবালক/ নাবালিকা গ্রহীতার নামঃ
উক্ত নাবালকের পক্ষে স্বাভাবিক অভিভাবক পিতা------
পিতার নামঃ
মাতার নামঃ
ও পিতার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর সহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা--
এবং দলিলের ৭নং কলাম- হস্তান্তরাধীন জমির নূন্যতম পক্ষে ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণ- এর শেষে লেখা হবে
নাবালক/নাবালিকা গ্রহীতার পক্ষে স্বাভাবিক অভিভাবক এর বরাবরে নিম্ন বর্ণিত জমি হস্তান্তর/ বিক্রয় করা হইল…
নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয়
রেজিস্ট্রেশ আইন ১৯০৮ এর ৩৫-ধারা মতে কোন নাবালক দ্বারা দলিল সম্পাদিত হতে পারে না ৷ একজন নাবালকের পক্ষে তার সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য তার পিতা, মাতা, ভাই অথবা অন্য কোন অভিভাবক নিযুক্তির মাধ্যমেই সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন ৷
গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট ১৮৯০ এর ৮নং ধারা মতে একজন নাবালকের পক্ষে অভিভাবক নিয়োগের জন্য জেলা জজ আদালত বরাবর আবেদন করতে হয় ৷ আদালত কর্তৃক সেই আবেদন পরীক্ষা করে দেখার পর নাবালকের সুবিধা হবে এমন ব্যক্তিকে অভিভাবক নিযুক্ত করবেন ৷ একমাত্র আদালত কর্তৃক নিযুক্তিয় অভিভাবক আদালতের অনুমতিক্রমে নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা বন্ধক রাখতে পারবেন ৷ এক্ষেত্রে ১০নং ধারা মোতাবেক আদালত কর্তৃক অনুমোদিত ফরমে করতে হবে ৷
আর আদালত কর্তৃক অভিভাবক নিযুক্ত না হলে সেক্ষেত্রে ১৮ বৎসর পূর্ণ হবার পর সাবালক হিসাবে গন্য হলে তার সম্পত্তি নিজেই হস্তান্তর করতে পারবেন ৷
তাই নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য আদালতের অনুমতি নিতে হবে ৷
একজন পিতাকে নাবালকের অভিভাবক নিযুক্ত হতে হয় না ৷ পিতা নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাক ৷ তাই নাবালকের পক্ষে কোন কাজ সম্পন্ন করতে পিতাকে আদালতের হুকুমের অপেক্ষা করতে হয় না ৷
তবে নাবালকের নামে ক্রয় করা সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য আদালতের অনুমতি নিতে হবে ৷
পাগল, মানসিক প্রতিবন্ধী, নির্বোধ এদের যে কোন বয়সের হলেও তাদের সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য আদালতের অনুমতি নিতে হবে ৷
কারা কারা নাবালকের অভিভাবক হতে পারবেন?
আইনত স্বীকৃতি দ্বারা একজন নাবালকের পক্ষে যেসব ব্যক্তি অভিভাবক হতে পারবেন তারা হলেন, পিতা এবং পিতা কর্তৃক অছিয়তকৃত ব্যক্তি দাদা অথবা দাদা কর্তৃক অছিয়তকৃত ব্যক্তি, এছাড়া আপন সহোদর ভাই, ভাইয়ের ছেলে, পিতার আপন ভাইয়ের ছেলে ৷
যদি কোন নাবালকের পক্ষে রক্তের সম্পর্কিয় কোন আত্মীয় না থাকে ৷ সেই ক্ষেত্রে আদালত তার স্ব-বিবেচনায় ও ক্ষমতাবলে যে কাউকে নাবালক, পাগল, প্রতিবন্ধী, নির্বোধ উন্মাদ ব্যক্তির অভিভাবক নিয়োগ করবেন ৷
যেহেতু মুসলিম আইনে পিতা নাবালক সন্তানের আইনগত স্বাভাবিক অভিভাবক তাই একজন মাতা নাবালক সন্তানের অভিভাবক হতে পারেন না ৷
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে একজন মাতা নাবালকের অভিভাবকের আবেদন করতে পারেন, যখন দেখা যাবে যে নাবালকের প্রকৃত অভিভাবক নাবালকের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, নাবালকের ঠিকমত দেখাশুনা করেন তখন মাতা সন্তানের কল্যাণার্থে সন্তানের দেখাশুনা, ভরণপোষন, লেখাপড়া, চিকিৎসার জন্য অভিভাবকের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করতে পারবেন৷
(আরো বিস্তারিত জানতে এই পেজের সাথেই থাকুন)
একটি বায়না দলিল লিখবেন যেভাবে- Click