কিভাবে জাল দলিল সনাক্ত করবেন? How to identify fake documents

জাল দলিল চিহ্নিত করণের পদ্ধতি
জাল দলিল চিহ্নিত করণের পদ্ধতি

যে কোনো ডকুমেন্ট এর সম্পূর্ণ বা আংশিক তথ্য মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে তৈরি করে সেটাকে সত্য বলে প্রচার করাই হলো ভূয়া বা জাল, তেমনি জমি জমার বিষয়ে দলিলের ক্ষেত্রেও এমন তা লক্ষ্য করে যায় । যে কোন মিথ্যা দলিলকে জাল দলিল বলে 

সমাজে সর্বক্ষণই কিছু অসাধু শ্রেণীর লোক আছে । যারা অর্থের লোভে এমন জঘন্য কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকে । এই অসাধু লোকের দ্বারাই জাল দলিল গুলো প্রস্তুত হয়ে থাকে । তাই জমি ক্রয় করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যিনি বিক্রেতা তার খরিদকৃত জমির দলিলটি জাল কিনা বা সঠিক আছে কিনা। তার বিক্রেতার নিকট হইতে সকল ভায়া দলিল সংগ্রহ করতে হবে । যদি কোনো সন্দেহ মনে করা হয় তাহলে ভায়া দলিল গুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে । তার আগে জেনে নিতে পারি 

দলিলের প্রকারভদ গুলো :- 

(ক) সাফ কবলা দলিল (খ) হেবার ঘোষণা দলিল, (গ) বিনিময় দলিল (ঘ) কবুলিয়ত নামা দলিল (ঙ ) দানপত্র দলিল (চ) দানের ঘোষণাপত্র দলিল (দানের ঘোষণাপত্র দলিল এটা সনাতন ধর্মালম্বীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) (ছ) পাওয়ার অব এটর্ণী দলিল (জ) উইল দলিল (ঝ) বায়না দলিল () চুক্তি দলিল (ট) আপোষনামা দলিল, (ঠ) লীজ দলিল (ড) খায় খালাসী দলিল () ওছিয়ত নামা দলিল ইত্যাদি- 

জাল দলিল চিহ্নিত করণের পদ্ধতি: (দলিল যাচাই করন করে)

জমি ক্রয়ের জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে নেয়া ভায়া দলিল গুলো  এবং জমির মালিক তার মালিকানার সঠিক প্রমাণের জন্য যদি দলিল দেখায় সেগুলো নিম্নোক্তভাবে যাচাই করা- 

(ক) হাতের লিখা: ১৯৭২ সনের পূর্বের কোন দলিলের মূল কপি যদি বলপেন দিয়ে লিখা থাকে তবে তা জাল দলিল। কারণ তখনও বলপেন আবিস্কার হয় নি।

(খ) ষ্ট্যাম্প উত্তোলনের তারিখ: ষ্ট্যাম্প উত্তোলনের সময় ষ্ট্যাম্পের পেছনে গ্রহিতার নাম, ঠিকানা, ভেন্ডারের নাম, তারিখ, সীল ইত্যাদি থাকে। ষ্ট্যাম্প গ্রহণের তারিখের পূর্বের তারিখ দিয়ে দলিল সৃজন করা হলে তা জাল দলিল।

দলিল রেজিস্ট্রির জন্য কমিশন দরখাস্ত কিভাবে লিখবেন 

পৌর সার্ভায়ার দ্বারা জমি পরিমাপের দরখাস্ত

(গ) দলিলের প্রাচীনতা পরীক্ষা: ১৯৪৭ সনের পূর্বে, ১৯৬০ সনের পূর্বে। ৬-৯-৬৫ থেকে ১৬-২-৬৯ পর্যন্ত, বাংলাদেশ হওয়ার পরের ইত্যাদি দলিল। ১৯৪৭ সনের ১৪ আগষ্টের পূর্বের দলিলে যদি পাকিস্তান লেখা থাকে; ১৯৬০ সনের পূর্বের দলিলে যদি সিও (রেভিনিউ) লেখা থাকে; ৬-৯-৬৫ থেকে ১৬-২-৬৯ পর্যন্ত সময়ের হিন্দু মালিকের সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে কালেকটরের অনুমতি না থাকলে।

(ঘ) দলিলের গন্ধ পরীক্ষা করে : দলিলকে প্রাচীন বা অনেক পুরাতন করার জন্য নতুন দলিলকে পুরাতন কাঁথা, খড়ের গাদা, বাঁশের চৌঙ্গায় রাখা হয়। তখন এ সকল দ্রব্যাদির গন্ধ পাওয়া যায়। এরূপ দলিলকে সন্দেহের চোখে দেখে অন্যান্য তথ্যাদি যাচাই করতে হবে।

(ঙ) বালাম বহি পরীক্ষা করা : দলিল ও বালাম বহিতে গড় মিল থাকে। মূল দলিল বা সার্টিফাইট কপি বালাম বহির সাথে তুলনা করে গড় মিল নির্নয় করা যায়।

(চ) সাব রেজিস্ট্রি (এস আর) অফিস: মোহাম্মদপুর (মাগুড়া), ইসলামকাটি (তালা, সাতক্ষীরা), পলাশবাড়ী (গাইবান্দা), আত্রাই, পত্মী তলা, সদর (নওগাঁ), রাজাপুর (ঝালকাটি), ভূয়াপুর (টাংগাইল) ইসলামপুর (জামালপুর), নান্দাইল (ময়মনসিংহ), হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ), কসবা (বিঃবাড়িয়া), কেপুপাড়া (পটুয়াখালী), শ্রীপুর,  ইত্যাদি। বর্ণিত অফিসগুলি ১৯৭১ সানে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এই অফিসগুলোর ১৯৭২ সনের পূর্বের দলিলসমূহ বালাম বহিতে যাচাই করার সুযোগ নেই। এরূপ দলিল পাওয়া গেলে তা অন্যান্য পদ্ধতিতে সঠিকতা যাচাই করতে হবে।

(ছ) দুই এস আর অফিসের আওতায় দাতার জমি থাকলে: যেখানে দাতার বিক্রিত জমির পরিমাণ বেশী থাকে সেখানে দলিল রেজিস্ট্রি হতে হয়। কোন দাতার বিক্রিত জমির পরিমাণ যদি সাভারে এক একর এবং হরিরামপুরে ২ শতাংশ এবং উক্ত দলিলটি যদি হরিরামপুরে রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে তবে তাকে প্রাথমিকভাবে জাল দলিল হিসেবে সন্দেহ করতে হবে।

(জ) রেকর্ড রুম এর তথ্যাদি যাচাই করে: ‘চ’ উপঅনুচ্ছেদে বর্ণিত সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ১৯৭১ সনের পূর্বে কোন দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকলে এবং উক্ত দলিলে যদি দুটি ভিন্ন সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অধীন দাতার জমি থাকে তবে এই দলিলে তফসিলে বর্ণিত দাতার জমি সংশ্লিষ্ট জেলার রেকর্ড রুমের তথ্যের সহিত যাচাই করতে হবে।

দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ রাখার আবেদন

(ঝ) দলিলের স্বাক্ষর: দাতার স্বাক্ষর যদি অন্য কোন দলিল বা ডকুমেন্টে পাওয়া যায় তবে তার সহিত সন্দেহকৃত দলিলের স্বাক্ষর যাচাই করা।

(ঞ) তফসিল লিখার ভাষা: ১৯৬০ সনের পূর্বের দলিলে যদি সিও (রেভিনিউ) লেখা থাকে তবে তাকে জাল দলিল হিসেবে সন্দেহ করতে হবে। কারণ ১৯৬০ সনের পূর্বে সিও (রেভিনিউ) পদ ছিল না। ১৯৫৬ সনের পূর্বে কোন দলিলে যদি পূর্ব পাকিস্তান লেখা থাকে তাকেও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে হবে।

(ট) ভূমি উন্নয়ন কর: ১৯৭৬ সনের পূর্বের দলিলে যদি ভূমি উন্নয়ন কর শব্দটি লিখা থাকে তবে তাকে জাল দলিল হিসেবে সন্দেহ করতে হবে। কারণ ১৯৭৬ সনে ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ জারির পূর্বে ভূমি ব্যবস্থাপনায় এরূপ শব্দ ছিল না।

(ঠ) দশমিক এর প্রয়োগ: ১৯৬০ সনে পূর্ব পাকিস্তানে দশমিক পদ্ধতির হিসাব প্রবর্তিত হয়। ১৯৬০ সনের পূর্বের কোন দলিলে যদি দশমিক পদ্ধতিতে জমির হিসাব, খাজনার পরিমাণ উল্লেখ থাকে তবে তাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে হবে।

(ড) তফসিলে জরিপ তথ্যাদি: এস এ রেকর্ড চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরে শুধুমাত্র সিএস রেকর্ড দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করা হলে, বিআরএস রেকর্ড চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর শুধুমাত্র সিএস/এসএ রেকর্ডের তথ্যাদি দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করা হলে; (বর্তমানে ২৫ বছরের ইতিহাস লিখতে হয়)।

(ঢ) একাধিক রেফারেন্স: কোন দলিলের বর্ণনা অংশে যদি একাধিক দলিল/বিনিয়ম দলিল/রেজিস্ট্রিকৃত আপোষনামা ইত্যাদির রেফারেন্স থাকে তবে সেগুলোর মূল কপি/সার্টিফাইড কপি/ তফসিল যাচাই করা।

(ণ) বিনিময়: কোন দলিলের বর্ণনা অংশে যদি বিনিময় দলিলের রেফারেন্স থাকে তবে সে সকল বিনিময় কেস নথি নিয়মিত হয়েছে কিনা তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় যাচাই করা (ভারত হতে প্রত্যাগতদের বেলায়)।

(ত) কবুলিয়াত/বন্দোবস্ত যাচাই: সরকার কর্তৃক বন্দোবস্তকৃত জমির বন্দোবস্তের যাবতীয় তথ্যাদি ঢ নম্বর রেজিস্টারে সংরক্ষিত থাকে। কোন দলিলের বর্ণনা অংশে যদি বন্দোবস্তমূলে প্রাপ্ত এরূপ রেফারেন্স থাকে তবে সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারসমূহ যাচাই করা।

(থ) নামজারীর সময় দাতা, গ্রহীতা এবং খতিয়ানের অন্যান্য মালিকদের উপস্থিতিতে যথাযথ শুনানী গ্রহণ করা হলে।

মৃত স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর  আইনগত অধিকার।

জমির খতিয়ান থেকে অংশ বের করার নিয়ম

(দ) পাওয়ার অব এটর্ণী: পাওয়ার অব এটর্ণীর মাধ্যমে ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে দাতা অন্য কোন ব্যক্তির জমি বিক্রি করলে সে ক্ষেত্রে পাওয়ার অব এটর্ণী যথাযথ ভাবে যাচাই করতে হবে। এক্ষেত্রে পাওয়ার অব এটর্ণীটি যথাযথভাবে স্ট্যাম্পিং করা হয়েছে কিনা/রেজিস্ট্রি কিনা/দাতা জমি বিক্রির ক্ষমতা দিয়েছে কিনা ইত্যাদি তথ্যাদি যাচাই করতে হবে।

[হেবার ঘোষণা দলিল বা দানের ঘোষণাপত্র দলিল হলে সম্পর্ক কেমন তা যাচাই করা, মাঠ পর্চা পরীক্ষা করে নেয়া, নির্দিষ্ট ছক অনুসারে দলিল লেখা হয়েছে কিনা, হস্তান্তরিত জমির পরিমান সঠিক আছে কিনা যাচাই করা, রেজিস্ট্রি সীল সঠিক আছে কিনা, সাক্ষর পরীক্ষা করা, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প দ্বারা লিখিত দলিল খানা লাইসেন্স প্রাপ্ত স্ট্যাম্প ভেন্ডার /স্ট্যাম্প বিক্রেতার নিকট হইতে ক্রয় করা হয়েছে কিনা যাচাই করা এবং স্টাম্পে নির্দিষ্ট তারিখ ও ক্রেতার নাম ও স্ট্যাম্প এর নম্বর ভেন্ডারের রেজি বহিতে  লিখে রাখা সঠিকভাবে আছে কিনা যাচাই করা, ভাই বোনের সম্পর্কে কোনো ওয়ারিশ বাদ দিয়ে দলিল লিখলে, দলিলে কোনো সাক্ষর ওভার রাইটিং বা এলোমেলো আছে কিনা, অনুপস্থিত লোকের দ্বারা যেমন মৃত বা বিদেশ অবস্থান কালীন দলিল সম্পাদিত হয়ে থাকলে] 

জাল দলিলে বাতিল করণের পদ্ধতিঃ

জাল দলিল যেভাবই তৈরী করা হোক না কেন জাল দলিল সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই জাল দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। জাল দলিল রেজিষ্ট্রি হয়ে থাকলে তা দেওয়ানী আদালত সেচ্ছা ক্ষমতাবলে জাল দলিল বাতিলের নির্দেশ দিতে পারেন । এটা কেবল মাত্র আদালতের উপর ন্যাস্ত। 

রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ অনুসারে কোনো সম্পাদিত দলিল রেজিস্ট্রি হবার পর তা আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করার পর জাল দলিল বলে সঠিক প্রমাণিত হলে আদালত এইরুপ মোকদ্দমার সংশ্লিষ্ট কপি রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করবেন এবং রেজিস্ট্রি কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করে রেজিস্ট্রি বহিতে লিপিবদ্ধ দলিলের রেকর্ড সমূহ বাতিল করবেন । 

মুসলিম ফারায়েজ আইন

অনলাইনে নামজারী আবেদন 




ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url