নামজারি ফিস ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

নামজারি কোথায় করা হয়?

কোনো কারণে জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পুরাতন মালিকের নাম পরিবর্তন করে নতুন মালিকের নামে নামকরণ করে সংশোধিত খতিয়ান তৈরি করাকে মিউটেশন বা নামজারি বলে। উত্তরাধিকার, বিক্রয়, দান, জমির মেয়াদ বন্দোবস্ত সহ বিভিন্ন ধরনের হস্তান্তরের কারণে জমির মালিকানা পরিবর্তিত হয়। 

কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি না হলে মালিকানা দাবিতে নানা জটিলতা দেখা দেয়। জমি রেজিস্ট্রেশন, জমি ক্রয়-বিক্রয়, ভাড়া পরিশোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নামজারি প্রয়োজন। জমি হস্তান্তরের পর নামকরণ অনেকটাই বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।

নামজারি কোথায় করা হয়?

সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে নামজারী আবেদন করতে হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে মিউটেশন সহকারীর একটি পদের দায়িত্বে রয়েছে। একজন নাজির মিউটেশন ফি আদায় করেন। তহসিলদার (সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার) গণনা তদন্তের দায়িত্বে থাকেন। 

কোনো আবেদন করলে যে জমির নাম করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার নিয়ম রয়েছে। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তহসিলদার অফিসে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। এটা ঠিক না

ভূমি উন্নয়ন কর কি?

অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান পদ্ধতি

নামজারি ফিস ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৩০-০৬-২০১৫ ইং তারিখের ৩১০০০০০০০৪২০৪০১৯ ০৮-৫৯৮ নং পরিপত্র অনুযায়ী মিউটেশন /নামজারীর জন্য প্রয়োজনীয় ফি সমূহ - 

১। নামজারী আবেদনের জন্য কোর্ট ফি– ২০ টাকা।

২। নোটিশ জারি ফি– ৫০ টাকা।

৩। রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি – ১,০০০ টাকা।

৪। প্রতি নামজারী খতিয়ান সরবরাহ বাবদ– ১০০ টাকা।

অনলাইন নামজারী আবেদন ফরম 

নামজারির আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ক) সর্বশেষ নামজারি ও জমাভাগ/জমা একত্রিকরণের খতিয়ান (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

খ) সর্বশেষ গেজেটে প্রকাশিত খতিয়ানের কপি।

গ) ওয়ারিশ সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) (অনধিক ০৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত)।

ঘ) মূল দলিলের ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি।

ঙ)  সর্বশেষ জরিপের পর থেকে আবেদনকারীর আবেদন সময় পর্যন্ত হস্তান্তরের বায়া/পিট দলিল।

চ) হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা।

ছ)  আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে আদেশ ও আরজির সার্টিফাইড কপি।

জ) জমির চৌহদ্দিসহ কলমি নক্সা (আবেদনকারীর নিজের মত)।

ঝ) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।

ঞ) আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীর সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

ট) আবেদনকারীর পক্ষে মনোনীত কোন ব্যক্তির শুনানিতে থাকতে চাইলে ছবিসহ হলফনামার কপি।

ঠ) শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিডা কর্তৃক নির্ধারিত কাগজপত্র।

বিঃদ্রঃ ১। শুনানী গ্রহণকালে দাখিলকৃত কাগজের মূল কপি অবশ্যই আনতে হবে।

২। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দখল/প্রয়োজনীয় মালিকানার রেকর্ডপত্র দেখাতে হবে।

অনলাইনে জমির খতিয়ান আবেদন

কিভাবে আবেদন করতে হবে


সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। নির্ধারিত স্থানে জমির বিস্তারিত পরিচয় দিতে হবে। আবেদনে নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি ক্রয় দলিল নম্বর এবং বছর স্পষ্ট থাকতে হবে। মূল দলিলের অনুলিপি, দলিলের মাধ্যমে, পারচা বা খতিয়ানের অনুলিপি, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দলিল, উত্তরাধিকার সনদ (তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা), বিতরণ দলিল (যদি প্রযোজ্য হয়) জমা দিতে হবে। কোনো রায় বা ডিক্রির কারণে নাম জারি করতে হলে ডিক্রি বা রায়ের কপি জমা দিতে হবে। 

আবেদনকারী নিজে আবেদন করতে পারেন বা আবেদনকারী আবেদন করার জন্য একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারেন। আবেদনকারীর বা আবেদনকারীর প্রতিনিধির একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি আবেদনের সাথে আবেদনের নির্ধারিত স্থানে সংযুক্ত করতে হবে। 

নাম ইস্যু করার সময় যেন কোনো দালালের খপ্পরে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মহানগরে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এবং অন্যান্য এলাকায় ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

নামজারীর আবেদন বাতিল হলে কি করবেন?

নামজারী আবেদন যেকোনো কারণে বাতিল হতে পারে। যে কোনো কাগজ পত্রাদির ত্রুটির কারণে হতে পারে বা অন্য কোন কারণে এটি নামমঞ্জর হতে পারে। কিন্তু নামজারী আবেদন বাতিল হলে তা সংশোধনেরও ব্যবস্থা আছে। 

নামজারি আবেদন বাতিল হলে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর আদেশের বিরুদ্ধে আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আপিল করা হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদেশের বিরুদ্ধে একটি আপিল আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) এর কাছে রয়েছে। 

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে ভূমি আপিল বোর্ডে আপিল করা যাবে। এ ছাড়া রিভিশনের পথও খোলা আছে। যে কোন অনুমোদিত কর্মকর্তা তার নিজস্ব বিবেচনার ভিত্তিতে নথিপত্রের জন্য কল করে সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। 

এ ছাড়া পর্যালোচনার পথও খোলা রয়েছে। পর্যালোচনা মানে পুনর্বিবেচনা। আপনি যদি মনে করেন নথিতে কোনও ভুল পর্যবেক্ষণ আছে বা আবেদনটি বাতিল করা হয় তবে আপনাকে পর্যালোচনার জন্য আবেদন করতে হবে। 

যে কর্মকর্তা আদেশ জারি করেছেন তাকে অবশ্যই তা পর্যালোচনা করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে পর্যালোচনা করতে হবে। যাইহোক, একবার রিভিউ আবেদন দাখিল করা হলে কোন আপিল করা যাবে না।

সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা

১। ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল, ১৯৯০

২। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৩০ জুন ২০১৫ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৪২.০৪.০১৯.০৮-৫৯৮ নম্বর পরিপত্র।

৩। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৪৬.৬৮.০১৭.১৬-১০৮ নম্বর পরিপত্র।

৪। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৪২.৬৮.০০৬.১৯-৭১৪ নম্বর পরিপত্র।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট

১। www.land.gov.bd

২। www.mutation.land.gov.bd

ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url