সম্পত্তি বন্টনে ইসলামি শরিয়াহ

সম্পত্তি বন্টনে ইসলামি শরিয়াহ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ১৪শত বছর আগে বলেছিলেন, উত্তরাধিকার আইন নিজে জানুন এবং অন্যকে শেখান, সমস্ত জ্ঞানের অর্ধেক এই জ্ঞান  মুসলিম হাওয়া সত্ত্বেও উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কোনো ধারণা নেই।  

মুসলিম আইনে সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম

প্রত্যেক মুসলমানের জানা আবশ্যক। মুসলিম আইনে, একজন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ভিত্তিতে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হয়। এভাবে বণ্টন করাকে ফারায়েজ বলা হয়।

এখানে আমরা শুধুমাত্র উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা এবং পুত্র-কন্যাদের অংশ নিয়ে আলোচনা করব।

যাইহোক, যখন একজন মুসলমান মারা যায়, তখন তার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়।  আগে জেনে নেওয়া যাক সেই আনুষ্ঠানিকতাগুলো কী কী।

➡মৃত ব্যক্তির যদি পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকে, তাহলে তার দাফনের যাবতীয় খরচ তা থেকে পরিশোধ করতে হবে।

➡ যদি তিনি তার জীবদ্দশায় কোন ঋণ বহন করে থাকেন তবে তা অবশ্যই রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করতে হবে।

➡ যদি তার স্ত্রী বা স্ত্রীদের যৌতুক অপরিশোধিত বা আংশিক অবৈতনিক হয় তবে তা পরিশোধ করতে হবে।  মোট কথা আইন অনুসারে স্বামী মৃত বা জীবিত থাকুক না কেন স্ত্রীর সম্পূর্ণ যৌতুক স্বামীর সম্পত্তি থেকে সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হবে।

➡ মৃত ব্যক্তি কোনো দান বা উইল করলে তা প্রাপককে দিতে হবে।

উপরোক্ত সকল কাজ সম্পন্ন করার পর মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারাজ আইন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। 

এখন জেনে নেওয়া যাক এই সম্পত্তি কি অনুপাতে বা কিভাবে বন্টন করা হবে।

আরো পড়ুন-- বিভিন্ন প্রকার দলিলের রেজিস্ট্রি ফিস

  জমি পরিমাপ নির্ণয়ের পদ্ধতি

সম্পত্তিতে পিতা মাতার অংশ

পিতার অংশ: পিতা তার মৃত সন্তানের সম্পত্তি তিন উপায়ে উত্তরাধিকারী হন।  যদি মৃত সন্তানের পুত্র থাকে, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের পুত্রের পুত্র, তবে মৃত সন্তানের পিতা সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ পাবেন।

মৃত সন্তানের একমাত্র কন্যা বা পুত্রের কন্যা থাকলে পিতা সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন।

এক্ষেত্রে কন্যাসহ অন্যদের দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি পিতাও পাবেন।  আর যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র, কন্যা বা পুত্র না থাকে, তবে পিতা তার অংশ অনুযায়ী অন্যান্য অংশীদারদের দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা পাবে।

কিন্তু মৃত ব্যক্তির যদি কোন সন্তান না থাকে এবং পিতা না থাকে তবে তার সম্পত্তি তার জীবিত ভাই বা ভাইদের কাছে যাবে।  ভাই না থাকলে তার ভাইয়ের সন্তানরা পাবে।

মায়ের অংশ: মা তার মৃত সন্তানের সম্পত্তি তিন উপায়ে পেয়ে থাকেন।  যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে, যতই নিম্নের হোক থাকলে অথবা মৃত ব্যক্তির আপন, পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই-বোন থাকলে মা  ১/৬  পাবে।

যদি মৃতের কোন সন্তান বা পুত্র না থাকে, যতই নিচের হোক না কেন এবং মৃত ব্যক্তির যদি একাধিক ভাই বা বোন না থাকে তবে মা পাবে এক তৃতীয়াংশ ১/৩।

যদি কোন সন্তান বা পুত্র না থাকে, যতই নিচের হোক অথবা যদি কমপক্ষে দুই ভাই-বোন না থাকে এবং যদি মৃতের স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেওয়া হয়, তবে তার এক তৃতীয়াংশ ১/৩ মা ভাগ পাবেন ।  মৃত ব্যক্তির ভাই থাকলেও মা পাবে ১/৩ ভাগ।

স্বামী স্ত্রীর অংশ

স্বামীর ভাগ: স্বামী মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির অংশ ২টি উপায়ে পায়।  একজন স্বামী কখনই তার মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন না।  মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্র থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে।  মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্র না থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবেন।

স্ত্রীর অংশ: স্ত্রীও তার মৃত স্বামীর সম্পত্তি দুইভাবে পায়।  একজন বিধবাকে কোনোভাবেই তার স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।  মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা পুত্র সন্তান থাকলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ পাবে।  মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা পুত্র না থাকলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। একাধিক স্ত্রী থাকলেও সবাই সমানভাবে ১/৪ ভাগ পাবে।

পুত্র ও কন্যার অংশ

পুত্রের অংশ: মৃত ব্যক্তির পুত্র বা পুত্ররা সর্বক্ষেত্রে সম্পত্তি পায়।  মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা থাকলে পুত্র বা পুত্র কন্যা বা কন্যার চেয়ে দ্বিগুণ সম্পত্তি পাবে।  মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পিতা-মাতা ও স্ত্রীর নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি পুত্র-কন্যাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।  তবে কন্যা না থাকলে পুত্র বা পুত্রগণ অংশীদারদের অংশের পর অবশিষ্ট উত্তরাধিকারী হিসাবে সমগ্র সম্পত্তি পাবেন।

কন্যার ভাগ: কন্যারা তিনভাবে পিতা মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারে।  একমাত্র কন্যা হলে সে রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক বা (১/২) অংশ পাবে। একের অধিক কন্যার ক্ষেত্রে সকলেই সমানভাবে দুই তৃতীয়াংশ বা ২/৩ ভাগ পাবে। পুত্র থাকলে পুত্র ও কন্যা সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ কন্যা পুত্রের অর্ধেক অংশ পাবে। যাই হোক, একটি কন্যা তার পিতা মাতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয় না।

পিতা মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীরা তার জীবদ্দশায় যে সম্পত্তি পেতেন তা পাবেন।

কিভাবে জাল দলিল সনাক্ত করবেন?

দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি প্রাপ্তির নিয়ম

অন্যান্য ওয়ারিশগণের অংশ

১৯৬১ সালের আগে এই নিয়ম ছিল না । পরে একটি আইন পাস করে এই নিয়ম চালু করা হয়।  কেননা ইসলামে এতিমদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয় না। আবার মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোনো সন্তানকে অবৈধ বলে গণ্য করা হয় না।  ফলে তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।  

যাইহোক, যদি কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার অভিপ্রায়ে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে, তবে সন্তানটি সম্পত্তি পাবে না।  সৎ পুত্র ও কন্যারা সৎ পিতা বা সৎ মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না।

একইভাবে সৎ বাবা বা সৎ মা সৎ ছেলে বা মেয়ের সম্পত্তি পায় না।  কেউ কাউকে হত্যা করলে, হত্যাকারী তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না।  

জীবিত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, কেউই অন্যের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না।  অবৈধ সন্তান তার মা ও মায়ের আত্মীয়দের কাছ থেকে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী (মুসলিম হানাফী আইন অনুযায়ী) সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।

যদি মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকার না থাকে এবং তিনি তার জীবদ্দশায় কাউকে উইল না করার ব্যবস্থা করে থাকেন তবে সরকার তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।  উত্তরাধিকার সম্পর্কে উপরোক্ত সাধারণ বিষয়গুলো মাথায় রাখলে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের জটিলতা দূর হবে।

ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url