সাব কবলা দলিলের ফরমেট 2023

সাব কবলা দলিলের ফরমেট

দলিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষ্য, কোন সম্পত্তির পরিচয় প্রদানের মাধ্যম হলো দলিল ৷ কথায় বলে দলিল যার জমি তার- 

আজ জানবো একটি দলিলের পরিপূর্ণ বিষয়বস্তু সম্পর্ক, অনেকই আছে সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে জমি ক্রয় করেন, দলিলে সামান্য ভুলের কারনে হতে পারে আপনার সর্বনাশ ৷ একটি দলিল লেখার সময় সার্বিক বিষয়াদি খুব খেয়াল করে লেখা জরুরী, কেননা দলিলের ভুলের কারণে পরবর্তীতে নামজারী করতে যেমন ঝামেলা অথবা নামজারী নামঞ্জুরও হতে পারে এমনকি হস্তান্তর বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়৷ 

দলিলের ফরমেট

একটি দলিলে ১নং হইতে ২২ নং ক্রমিকে সীমাবদ্ধ থাকে ৷ 

সাব কবলা দলিলের ফরমেট

ক্রমিক নং- ১ : ১নং ক্রমিকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নাম/ নিবন্ধন কার্যালয়ের নাম লেখা থাকবে । 

ক্রমিক নং- ২ : এখানে দলিলের সার সংক্ষেপ- দলিলের প্রকৃতি, যেমন সাব কবলা দলিল। মৌজার নাম, তার পর হস্তান্তরকৃত জমি পৌরএলাকাভুক্ত জমি নাকি ইউনিয়ন এলাকাধীন জমি তা উল্লেখ্য করতে হবে অথবা সিটি কর্পোরেশন এলাকাভুক্ত হলে তার নাম সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে । তার পর থানা/উপজেলার নাম এবং জেলার নাম 

তার পর বিক্রয়কৃত/হস্তান্তরকৃত জমির পরিমান অংকে ও কথায় সঠিকভাবে লিখতে হবে, শ্রেণীর ঘরে জমির অবস্থান কি খতিয়ানে দাগ নম্বর অনুযায়ী যেমন- বাগান, বাড়ি, নামা, কান্দা, পতিত, ভিটা, দোকান, বালু, গুদাম ইত্যাদি হতে পারে। তার পর হস্তান্তরকৃত জমির মূল্য অংকে ও কথায় লিখতে হবে । 

সাব কবলা দলিলের ফরমেট

ক্রমিক নং- ৩ : এখানে দলিলের ক্রেতা/গ্রহীতার নাম, তার জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে মিল রেখে সঠিকভাবে লিখতে হবে, পিতা ও মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে মিল রেখে সঠিক লিখা হয়েছে কিনা যাচাই করবেন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টিআইএন সনদ (টিন সার্টিফিকেট) প্রয়োজন হতে পারে, 

তার পর ক্রেতা কোন জাতির লোক তার ধর্ম যেমন মুসলমান হলে ইসলাম আর হিন্দু হলে সনাতন ধর্ম লিখতে হবে, পেশা ও জাতীয়তা লিখতে হবে তার পর ঠিকানা- সেটা জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী হতে হবে ।

তবে ঠিকানা লেখার সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী অনেকেই আছেন দূরে কর্মস্থলে থাকায় সেখানকার ঠিকানা জাতীয় পরিচয় পত্রে তুলেন, তাহলে আপনাকে যা করতে হবে ক্রেতা/গ্রহীতার জন্ম স্থান এর ঠিকানা দিতে হবে স্থায়ী ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা দিতে হবে বর্তমান  ঠিকানায় । 

সাব কবলা দলিলের ফরমেট

ক্রমিক নং- ৪ : ক্রমিক নং ৩ এর মতই এখানে দাতা/ বিক্রেতার নাম, পিতা ও মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রয়োজনে টিন সনদ উল্লেখ্য করতে হবে, ধর্ম, পেশা, জাতীয়তা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সঠিকভাবে লিখতে হবে৷ 

তবে দলিল দাতার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয় সেটা হলো নামের ভিন্নতা যেমন, জাতীয় পরিচয় পত্রে এক রকম নাম এবং তার নামীয় পর্চায় বা নামজারী পর্চায় অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন নাম দেখা যায়, সেক্ষেত্র করণীয় হলো 

একই ব্যক্তির দুই নাম উল্লেখ্য করে একটি প্রত্যয়ন লিখে দাতা ইউনিয়ন এলাকার বাসীন্দা হলে চেয়ারম্যান ও মেম্বার দ্বারা এবং দাতা পৌরএলাকা বা সিটিকর্পোরেশন এলাকার বাসীন্দা হলে মেয়র কর্তৃক সত্যায়িত করে দলিলে মূল নামে সাথে ওরফে ব্যবহার করে অপর নাম দিয়ে দলিল লিখলে কোন সমস্যা হবে না ৷ 

সাব কবলা দলিলের ফরমেট

ক্রমিক নং- ৫ : কোন অভিভাবক যদি তার নাবালক সন্তানের নামে সম্পত্তি ক্রয় করতে চান বা কোন অভিভাবক যদি তার নাবালকে সন্তানের নামীয় সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে চান তাহলে সেই নাবালকে সহ অভিভাবকের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ৫ নং কলামে লিখতে হবে৷ 

ক্রমিক নং- ৬ : সম্পত্তি হস্তান্তরকারী বা বিক্রেতা যদি বিক্রিত জমিটি কোন পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তি কিভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন তার বিবরণ লিখতে হবে৷ 

ক্রমিক নং- ৭ : একটি দলিলের মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয় ৭নং কলামে যাকে বলা হয় ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণ- হতে পারে রেকর্ড সূত্রে, এবং রেকর্ডীয় মালিকের পর পরবর্তী বিভিন্ন ভায়া দলিলের তথ্য গুলো তুলে ধরার মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের বিবরণ লেখা হয়, এবং উপরের ছবিতে ৭নং কলামে শেষে কয়েক লাইন বেশ গুরুত্বপূর্ন, 

যেমন দলিল দাতার ভাষায় সেটি লেখা হবে- তফসিল বর্ণিত ভূমি আমি ইতি পূর্বে কাহারো নিকট হস্তান্তর কোন প্রকার স্ট্যাম্প, কাগজ বা বায়নাপত্র কাগজে দস্তখত বা কোন প্রকার হস্তান্তর জনিত কাগজপত্রে আবদ্ধ হই নাই। ভবিষ্যতে তফসিল বর্ণিত ভূমি সম্পর্কে কোন তঞ্চকতা ও দোষ প্রকাশ পাইয়া অথবা অন্য কোন ওয়ারিশ কর্তৃক আপনার ক্রয়কৃত ভূমির কোন প্রকার ক্ষতি হইলে তাহা সম্পূর্ণ ক্ষতি পূরণ প্রদান করিতে বাধ্য ও দায়ী রহিলাম । 

সাব কবলা দলিলের ফরমেট

ক্রমিক নং- ৮ :  জমি ক্রয়কারী অর্থাৎ ক্রেতা/গ্রহীতার হারাহারি মালিকানার অংশ বসাতে হবে, যদি ক্রেতা একজন হয় তাহলে এই অপশনটি প্রযোজ্য নহে লিখে দিতে হবে । একাধিক ক্রেতা/গ্রহীতার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য 


ক্রমিক নং- ৯ :  উপরে ক্রমিক নং ৮ এর মতোই দাতা/বিক্রেতার ক্ষেত্রে হারাহারি মালিকানার অংশ বসাতে হবে, বিক্রেতা একজন হলে তাহলে এই অপশনটি প্রযোজ্য নহে লিখে দিতে হবে । একাধিক বিক্রেতা/দাতার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য । 

ক্রমিক নং- ১০ :  এখানে দলিল সম্পাদনের তারিখ দিতে হবে । একটি দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দলিল রেজিস্ট্রি করার অনুমতি আছে । এখানে বাংলা সন তারিখ এবং ইংরেজি সাল ও তারিখ লিখতে হবে । 
সাব কবলা দলিলের ফরমেট


ক্রমিক নং- ১১ :  সম্পত্তির তফসিল ১১ নং কলামে লেখা হয়, কোন সম্পত্তির পরিচয়ের একমাত্র মাধ্যম হলো তফসিল, এখানে হস্তান্তরিত সম্পত্তির জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, মৌজা, জে,এল, নং লিখে উপরে ছবির মতো করে টেবিল আকারে খতিয়ান, নামজারী খতিয়ান, দাগ নং, জমির শ্রেণী, দাগের মোট জমির পরিমান এবং সেই হস্তান্তর বা বিক্রয়কৃত জমির পরিমান লিখলে ফরমেট টি অনেক সুন্দর লাগবে । দাগ নং টি অংকে লেখার পাশাপাশি কথায় লেখা জরুরি । এবং একাধিক খতিয়ান হলে নিচে মোট জমির পরিমাণ যোগ করে দখলকৃত দাগে জমির পরিমাণ এর সাথে দাগের কোন অংশে জমির দখল সেটা লিখে দিতে হবে । মৌয়াজি- এখানে বিক্রয়কৃত জমির পরিমান কথায় লিখে দিতে হবে 

ক্রমিক নং- ১২ :  সম্পত্তির তফসিল চৌহদ্দি:- চৌহদ্দি জমির দিক নির্দেশ করে। তাই হস্তান্তরিত সম্পত্তির চার পাশে কার অবস্থান তা সঠিকভাবে উল্লেখ করা ভালো ।

ক্রমিক নং- ১৩ :  হস্তান্তরিত সম্পত্তির পরিমান এখানে অংকে ও কথায় লিখতে হবে । 
ক্রমিক নং- ১৪ :  হস্তান্তরিত সম্পত্তির দলিলে লিখিত মূল্য এখানে অংকে ও কথায় লিখতে হবে ।

সাব কবলা দলিলের ফরমেট


ক্রমিক নং- ১৫ :  হস্তান্তরিত সম্পত্তির নকশা এখানে বিক্রয়কৃত জমির মৌজার নকশা সিট দেখে হাতে নকশা তৈরি করতে হবে এবং নকশায় যেই দিকে জমির দখল প্রদান করা হবে সেখানে রঙিন কলম দিয়ে আঁকিয়ে দখলের নির্দেশ বুঝানো হবে । 

ক্রমিক নং- ১৬ : কৈফিয়ত (যদি থাকে) দলিল সম্বন্ধে যে কোন আপত্তি বা সমস্যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ।  যেমন দলিল দাতা যদি শিক্ষিত হয় এবং ইতি পূর্বে তিনি সাক্ষর করেছেন বর্তমানে তিনি অসুস্থতার কারণে সাক্ষর করতে না পারায় বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা দলিল টিপ সহি ও সম্পাদন করিলেন । এই বিষয় গুলো উল্লেখ করা যাবে ।  

ক্রমিক নং- ১৭ : এখানে বাম পাশে দলিল দাতা/বিক্রেতা এবং ডান পাশে গ্রহীতা/ ক্রেতার নিজ হস্তে সাক্ষর অথবা টিপ সহি দলিল সম্পাদন করতে হবে । 

সাব কবলা দলিলের ফরমেট

ক্রমিক নং- ১৮ : এখানে  ক ও খ অপশনে দুইটি সাক্ষীর নাম থাকবে । চাইলে টেবিল আকারেও লেখা যেতে পারে । 
সাব কবলা দলিলের ফরমেট



ক্রমিক নং- ১৯ : সনাক্তকারী এখানে দলিল দাতার পক্ষ হইতে একজন পরিচিত সাক্ষী থাকবেন । 

ক্রমিক নং- ২০ : এখানে একজন দলিল লেখক হস্তান্তরিত সম্পত্তির সঠিক পরিচয় জেনে তার বর্তমান বাজার মূল্য সম্পর্কে অবগত হইয়া দলিলে মুসাবিদকারী  হবেন ও দলিলটি কতটি ফর্দে লিখিত তা উল্লেখ করবেন এবং দলিল লেখকের সনদ নম্বর সহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও রেজিস্ট্রি অফিসের নাম লিখতে হবে । 

সাব কবলা দলিলের ফরমেট


ক্রমিক নং- ২১ : হলফ নামা ১৯৭২ সনের ১৪২ নং আদেশে, ১৯০৮ রেজিস্ট্রেশন আইন এবং ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুসারে দলিলের হলফ নামা- যা দলিল দাতার নাম ঠিকানা সহ দাতা কর্তৃক বিশদ বিবরণ থাকবে । হলফ নামা ৩০০/- টাকার নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পে লিখিত হবে 

সাব কবলা দলিলের ফরমেট



ক্রমিক নং- ২২ :  সাব রেজিস্টারের পদবি সহ সাক্ষর সিল ও তারিখ লিখে রাখতে হবে যা সাব রেজিস্টার কর্তৃক পূরণ হবে । 

দলিলের কি কি বিষয় খেয়াল করতে হবে?

১। দলিলের প্রকৃতি ২ নং কলামের সাথে ৭ নং ও ১১ নং কলামে ঠিক আছে কিনা, যেমন সাব কবলা 

২ ৷ মৌজার নাম ২, ৭ ও ১১ নং কলামে একই মৌজার নাম লেখা আছে কিনা যাচাই করা ৷ 

৩৷ জমির শ্রেনীর ২নং কলামে ও ১১ নং কলামের তফসিলে একই রকম লেখা আছে কিনা ৷ 

৪৷ জমির পরিমান ২নং ৭নং ও ১১ নং তফিসল কলামে ও মোয়াজি তে জমির পরিমাণ কথায় লেখা আছে কিনা এবং ১৩ নং কলামে অংকে ও কথায় লেখা আছে কিনা 

৫৷ দলিলে লিখিত মূল্য ২নং কলামে ও ১৪ নং কলামে অংকে ও কথায় সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কিনা লক্ষ্য করা ৷ 
৬৷ দলিলের প্রতি পৃষ্ঠার দাতার স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে কিনা ও ১৭নং কলাম, হলফনামার হলফকারী অংশে দাতার স্বাক্ষর আছে কিনা যাচাই করা এবং ৪নং কলামে দাতার ছবিতে দাতার স্বাক্ষর দেয়া থাকবে ৷ 

৭৷ গ্রহিতার স্বাক্ষর ১৭ নং কলাম ও ৩ নং কলামে গ্রহিতার ছবিতে স্বাক্ষর দেয়া থাকতে হবে ৷ 

৮৷ খতিয়ান ও দাগের সাথে মিল রেখে রেকর্ড মালিকের নাম ৭নং কলামে বিবরণ লেখা আছে কিনা, একই দাগ, খতিয়ান ১১ নং কলামে তফসিলে লেখা আছে কিনা খুব খেয়াল করতে হবে ৷ 

৯৷ জমির চার পাশের চৌহুদ্দি ১২নং কলামে সঠিক ব্যক্তিগণের নাম লেখা হয়েছে কিনা যাচাই করে নেয়া ৷ 

১০৷ হস্তান্তরিত সম্পত্তির হাত নকশা ১৭নং কলামে ক্রয়কৃত অংশে রঙ্গিন বলপেন দিয়ে আঁকা হয়েছে কিনা 

দলিলের কোন অংশে ভুল থাকলে কি কি সমস্যা হতে পারে?

যখন একটি দলিল রেজিস্ট্রি করার কম্পিউটার দ্বারা কম্পোজ করা হয়, তখন টাইপ রাইটার পূর্বের কোন দলিল কপি করে তার উপর লেখা শুরু করেন ৷ দেখা যায় ভুল বশত পূর্বের দলিলের কিছু অংশ পরে দলিলে থেকে যায় ৷ হয়তো অজ্ঞতা বশত দলিলটি রেজিস্ট্রিও হয়ে যায় ৷ 
পরবর্তী সময়ে নামজারী করার ক্ষেত্রে বিরাট জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে ৷ 

এমনকি অজ্ঞতা দাগ ও খতিয়ানের ভুলের এমন জটিল সমস্যার তৈরি হয় ৷ 

তাই একটি দলিল সম্পূর্ণ প্রস্তুত করার পর সেটা কয়েকবার রিভিশন করে যাচাই করে নেয়া ৷ 

এই ছিল একটি সাব কবলা বা যে কোন প্রকার দলিলের বিস্তারিত বিষয়াদি ৷ সম্পত্তির মালিকানার সত্যতা যাচাই করণ ও সত্যতা যাচাই করার ক্ষেত্রে দলিল, বা বিক্রয় চুক্তি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দলিল ৷ 

ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url