বিবাহের হলফনামা লেখার নিয়ম
বিবাহের হলফনামা লেখার নিয়ম |
প্রচলিত অর্থে, কোর্ট ম্যারেজ বলতে সাধারণত হলফনামার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ ঘোষণা করাকে বোঝায়। এই হলফনামাটি ৩০০/- টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সম্পন্ন করা হয়।
এটি একটি বিয়ের ঘোষণা মাত্র। অর্থাৎ, এই হলফনামার মাধ্যমে বর-কনে শুধুমাত্র ঘোষণা করেন যে তারা বৈধভাবে বিবাহিত। প্রথমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে।
তারপর তারা ইচ্ছা করলে এই হলফনামা রাখতে পারেন। শুধুমাত্র পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়ে ছাড়াই এই হলফনামা সম্পন্ন করা উচিত নয়। অনেক সময় বিয়ের হলফনামা বিয়ের জন্য আইনি প্রয়োজনীয়তা না মেনে শপথ নেওয়া হয়, বিশেষ করে সাক্ষীদের উপস্থিতি ছাড়াই। এতে বিয়ের হলফনামা সম্পূর্ণ হবে না।
কিভাবে একটি বিয়ের হলফনামা লিখবেন
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক কার্যালয় জামালপুর ৷
বিবাহের হলফনামা (কোর্ট ম্যারেজ)
প্রথম পক্ষঃ মোঃ সজীব আহসান, পিতাঃ নুরুল আমিন, মাতাঃ সানজিদা খানম, জন্ম তারিখ- ০১/১২/১৯৯৮ ইং, জাতীয় পরিচয় পত্র- ৪০১২৪৫৭৯৪২৫, ধর্ম : ইসলাম, পেশা: চাকুরী, জাতীয়তা: বাংলাদেশী, ঠিকানাঃ- গ্রামঃ পাথালিয়া, পোঃ জামালপুর, উপজেলাঃ জামালপুর সদর, জেলাঃ জামালপুর ।
দ্বিতীয় পক্ষঃ মাহবুব আক্তার, পিতাঃ ফজলুল করিম, মাতাঃ ফাতেমা জান্নাত, জন্ম তারিখ- ০৮/০৪/২০০১ ইং, জাতীয় পরিচয় পত্র- ৯৫৭৮১৫৭২৫, ধর্ম : ইসলাম, পেশা: ছাত্রী, জাতীয়তা: বাংলাদেশী, ঠিকানাঃ- গ্রামঃ চর পাথালিয়া, পোঃ জামালপুর, উপজেলাঃ জামালপুর সদর, জেলাঃ জামালপুর ।
আমরা উভয় পক্ষ ধর্মত্ব প্রতিজ্ঞাপূর্বক অত্র হলফনামা দ্বারা ঘোষণা করিতেছি যে, আমরা জন্ম সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা ৷ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইনের প্রতি যথেষ্ঠ শ্রদ্ধাশীলও আস্থা ভাজন৷ আমরা উভয় পক্ষ বর্তমানে প্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ সাবালক ও সাবালিকা ৷ আমরা নিজেদের ভালো মন্দ বুঝার যথেষ্ঠ জ্ঞান বুদ্ধি অর্জন করিয়াছি৷ আমরা দীর্ঘ দিন যাবৎ একে অপরকে ভালোভাবে চিনি ও জানি ৷ আমরা নৈতিক গুনাবলি সম্পর্কে অবগত আছি ৷ আমরা উভয়ের নৈতিক গুনাবলি পর্যালোচনা করিয়া দীর্ঘ দিন কথা-বার্তা ও আচার ব্যবহারে একে অপরের প্রতি গভীরভাবে মুগ্ধ হইয়া ভালোবাসার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হই ৷ তাই নিজের মঙ্গলার্থে উভয়ের ভালোবাসাকে স্থায়ী করণের লক্ষ্যে একে অপরকে বিবাহের প্রস্তাব করি, তাহাতে কারো কোন আপত্তি না থাকায় আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছি ৷
আমাদের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে উভয়ে সম্মত হইয়া মুসলিম ইসলামিক শরীয়া মোতাবেক উভয় পক্ষের তিনজন স্বাক্ষীর উপস্থিতে স্থানীয় কাজীর মাধ্যমে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা দেন মোহর ধার্য করিয়া একে অপরকে স্বামী স্ত্রী হিসাবে কবুল বলিয়া বিবাহ রেজিস্ট্রি করিয়াছি ৷
অদ্য মাননীয় নোটারী পাবলিক কার্যালয় জামালপুর বরাবরে অত্র বিবাহের হলফনামা সম্পাদন করিলাম ৷
আমরা অত্র হলফকারী অদ্য তারিখ হইতে আইনগতভাবে পরস্পর স্বামী স্ত্রী হিসাবে পরিচিতি ও পরিগণিত হইলাম। এবং আজীবন ঘর সংসার করিব বলিয়া অঙ্গীকার করলাম । আমরা পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখিয়া উভয়ের আদেশ, নিষেধ মানিয়া চলিব। আমাদের বিবাহ সম্পর্কে আমাদের কোন পক্ষের কোন আত্মীয় স্বজন কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা করায় তাহলে তাহারা আইনত দণ্ডনীয় হইবে ।
আমরা আরোও ঘোষণা করিতেছি যে, অদ্য হইতে আমরা স্বামী স্ত্রী হিসাবে পরিচিত হইয়া আজীবন একে অপরের সুখে দুঃখে চির সাথী হয়ে থাকিব ।
সাক্ষীগণের নাম :
উপরোক্ত বর্ণনা আমাদের জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সম্পূর্ণ সত্য জানিয়া আমরা অদ্য মাননীয় নোটারি পাবলিক কার্যালয়, জামালপুর হাজির হইয়া অত্র হলফনামায় নিজ নিজ নাম সাক্ষর করিয়া সম্পাদন করিলাম ।
ইতি তাং -----
হলফকারীগণের সাক্ষর
১।
২।
হলফকারীদ্বয় অত্র বিবাহের হলফনামায় তাহাদের
নিজ নিজ নাম সাক্ষর করিলে আমি তাহাদের সনাক্ত করিলাম ।
(বিঃদ্রঃ- উপরোক্ত হলফনামাটি ৩০০/- টাকার তিনটি নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পে সম্পাদন করতে হইবে এবং আপনার পছন্দ মতো বেশ কিছু শর্ত দিয়ে লিখতে পারেন)
বিবাহ নিবন্ধন করতে যা জরুরী
মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সাক্ষীর উপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। ছেলে এবং মেয়েদের অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী, প্রতিটি বিবাহ অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। রেজিস্ট্রেশন হল কার সাথে, কোন তারিখে, কোথায়, কত যৌতুক নেওয়া হয়েছে, কোন শর্তে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে, সাক্ষী ও আইনজীবীদের নাম ইত্যাদির হিসাব লিখতে হবে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী নিবন্ধনের দায়িত্ব বিয়ে প্রধানত বরের উপর। বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। অন্যথায় কাজী ও পাত্রকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
যে ক্ষেত্রে কাজী বিবাহ করেন, কাজী অবিলম্বে বিবাহ নিবন্ধন করবেন। নিকাহনামা বা কাবিননামা ছাড়া বিয়ে প্রমাণ করা খুবই কঠিন। বিবাহ নিবন্ধিত হলে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা সহজ হয়।
যৌতুক আদায় ও স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্য কাবিননামা প্রয়োজন। শিশুর আইনি পরিচয় নিশ্চিত করতে কাবিননামা প্রয়োজন। কাবিননামা ছাড়া শুধুমাত্র বিয়ের হলফনামা সম্পন্ন হলে বৈবাহিক অধিকার কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়ে। হিন্দু বিবাহের ক্ষেত্রে, বিবাহ অবশ্যই হিন্দু আইনের রীতিনীতি অনুসারে একজন প্রাপ্তবয়স্ক বর এবং কনের মধ্যে সম্পাদন করতে হবে। বর্তমানে, হিন্দু বিবাহে নিবন্ধন ঐচ্ছিক।
শুধু কোর্ট ম্যারেজ যদি করা হয়
যদিও কোর্ট ম্যারেজ বলে কিছু নেই, তবুও কেউ যদি প্রচলিত অর্থে কোর্ট ম্যারেজ নামে শুধুমাত্র হলফনামা করে বিয়ে করে এবং বিয়ে রেজিস্ট্রি না হয় তাহলে চিন্তার কিছু নেই। কাজীর সাথে সরাসরি কথা বলে বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হবে এবং হলফনামার সাথে সমস্ত তথ্য ও তারিখ মিলিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হবে। হিন্দুরাও বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে পারে।