দলিল লেখক সনদ পাওয়ার যোগ্যতা

দলিল লেখক সনদ পাওয়ার যোগ্যতা

যোগ্যতা প্রমাণ ছাড়া কেউ দলিল লেখকের সনদ পেতে পারে না। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন তার সততা, চরিত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যাচাই করা হবে। বয়সও গুরুত্বপূর্ণ। 

তাছাড়া দলিল রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত আইন কানুন ও নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 

এছাড়াও দলিলাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন ফি দ্বিগুণ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ গুণ করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে এসব বিধিমালা প্রকাশ করে। 

গেজেট সূত্রে জানা গেছে, অতীতে দলিল লেখকের সনদ পেতে বয়স কোনো বাধা ছিল না। 

এখন সেই সুযোগ আর পাওয়া যাচ্ছে না। দলিল লেখকের পেশা গ্রহণের জন্য বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর। এর কম হলে তিনি আবেদন করতে পারবেন না। 

আবেদনকারীকে ন্যূনতম এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রারের প্রত্যয়ন শেষে নিবন্ধন মহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে সনদ পাওয়া যাবে। 

কি কি যোগ্যতায় দলিল লেখক সনদ পাওয়া যাবে?

গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দলিল লেখক সনদ পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প অ্যাক্ট, ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট এবং ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রবিধান সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞান দেখাতে হবে। 

বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে দলিল লেখকের সনদ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। 

অশিক্ষিত, সন্ত্রাসী, দলীয় ক্যাডার থেকে শুরু করে পান-সিগারেটের দোকানদার দলিল লেখকে পরিণত হয়েছে। 

তারা রাতারাতি টাকা কামানোর জন্য জাল দলিলের পেছনে ছুটছে। মৌখিকভাবে সাব-রেজিস্ট্রারদের হুমকি দেয়। 

ইতিমধ্যে কয়েকজন সাব-রেজিস্ট্রার তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। ফলে রেজিস্ট্রি অফিসগুলো দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। 

দলিল লেখকরা মনে করেন। বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির মহাসচিব এম এ রশিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুর রহমান বাহাদুর কালের কণ্ঠকে বলেন, দলিল লেখকরা পেশাজীবীদের হাতে জিম্মি। 

গত কয়েক বছরে লেখকদের দেওয়া হাজার হাজার সনদ যাচাই-বাছাই ও বাতিল না হলে প্রতারক ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে প্রাচীন এ পেশার মান রক্ষা করা যাবে না। দলিলের রেজিস্ট্রি রক্ষা করার জন্য অনুদানকারীর একটি হলফনামা প্রয়োজন। 

এখন দলিল জালিয়াতি রোধ করতে, দলিল বহনকারীর পাশাপাশি দলিল শনাক্তকারীকে একটি হলফনামা দিতে হবে। মূলত শনাক্তকারী দাতাকে শনাক্ত করে। 

জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে কেউ প্রতারণা করলে হলফনামায় স্বাক্ষরকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

এতে প্রতারণার অনেক ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত তিন বছরে দেশে অন্তত ১০ হাজার দলিল লেখকের সনদ দেওয়া হয়েছে।

এই ক্ষেত্রে ন্যূনতম নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি. বিভিন্ন দালাল ও দলীয় নেতাদের সহায়তায় এসব সনদ নিতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন করা হয়।

ফলে অযোগ্য, পেশাহীন ব্যক্তিরা ঘুষ দিয়ে সহজেই সনদ পেয়ে যায়। কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই ভূয়া 

মুসাবিদা (লেখা) করার মতো প্রতিভা তার নেই। চাল-ডাল বিক্রির লাইসেন্সের মতোই তারা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দলিল লেখকদের লাইসেন্স দিয়েছে।

দলিল লেখকরা জানান, শুধু টাউট নয়, সম্প্রতি কয়েকজন ভুয়া নেতা তাদের কাজ বাদ দিয়েছেন।

রেজিস্ট্রি দালালি করে সময় পার করছেন। তারা বিভিন্ন অজানা ও কুখ্যাত দলিল লেখকের সার্টিফিকেট নম্বর ব্যবহার করে 

আলোচনার নথি। সাব-রেজিস্ট্রাররা এসব বিতর্কিত দলিল নিবন্ধন করতে না চাইলে তাদের এসব কথিত ভুয়া নেতা এমনকি হুমকিও দেন। বেশ কয়েকজন সাব-রেজিস্ট্রার এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন,

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অবস্থা 

কপিস্টদের কাজ বালামের বই কপি করা। কিন্তু রেজিস্ট্রি অফিস তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

একই সঙ্গে নকল, তল্লাশি ও পরিদর্শন এবং দলিল কমিশনের ফি বাড়ানো হয়েছে।

বাংলা ও ইংরেজি দলিল প্রতি পাতা ৯/- টাকার পরিবর্তে যথাক্রমে ৩০/- টাকা ও ৪৫/- টাকা করা হয়েছে।

দলিল তল্লাশি ও পরিদর্শন ফি প্রথম বছরে ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। পরে প্রতি বছর ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা। ঢাকা শহরে কমিশন ফি ছিল ৩২৫/- টাকা। 

বর্তমানে তা করা হয়েছে ৫০০/- টাকা। উপজেলা, পৌরসভা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে কমিশন ফি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে 

দলিল লেখক সনদ নবায়ন

একজন সনদ প্রাপ্ত দলিল লেখককে প্রতি বছর তার সনদের নবায়ন করার জন্য জেলা রেজিস্টার বরাবর আবেদন করতে হয় । 

নিম্ন বর্ণিতভাবে সনদ নবায়নের জন্য আবেদন করতে হয় :- 

বরাবর, 

         জেলা রেজিস্ট্রার 

          জামালপুর৷ 

মাধ্যম ঃ সাব- রেজিস্ট্রার জামালপুর সদর, জামালপুর ৷ 

বিষয়ঃ ২০২৩ ইং সনের দলিল লিখার সনদপত্র নবায়নের জন্য আবেদন ৷ 

মহোদয়, 

           যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি জামালপুর জেলাধীন জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের---- নং সনদ প্রাপ্ত দলিল লিখক হিসাবে কর্মরত আছি৷ আমি ইংরেজি ২০২২ সনের ০১ জানুয়ারী হইতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত---- টি দলিল লিখিয়াছি এবং কর্তৃপক্ষের সন্তুষ্টি সহকারে কার্যাদি সম্পন্ন করিয়াছি ৷ ১৮৮২ ইং সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৯৫০ ইং সনের জমিদারী উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৮৯৯ ইং সনের স্ট্যাম্প আইন, ১৯০৮ ইং সনের রেজিস্ট্রেশন আইন ও The Registration (Amendment) Act-2004 এর প্রয়োজনীয় বিধান সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা রহিয়াছে ৷ আমি টাউট বিধির ১০ নং বিধি অনুযায়ী রেজিস্টার বহি সংরক্ষন করি এবং ৮ নং বিধি অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফিসাদি পক্ষগণের নিকট হইতে গ্রহণ করিয়া রশিদ প্রদান করি ৷ আমি ইংরেজি ২০২৩ সনের সনদপত্র নবায়ন ফি বাবদ ২৫০/- টাকা সোনালী ব্যাংক জামালপুর শাখায় ------- ইং তারিখে ------ নং চালান মূলে ১-২১৬১-০০০০-১৮৫৪ নং কোডে এবং ইংরেজি ------- তারিখে ------ নং চালান মূলে ভ্যাট কর্তন বাবদ ৩৭.৫০ টাকা ১-১১৩৩-০০৩৫-০৩১১ নং কোডে জমা প্রদান করিয়াছি ৷ চালানের মূল কপি মহোদয়ের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অত্র সাথ প্রেরণ করা হইল ৷ 

     আমি উপরোক্ত তথ্যাদি সম্পূর্ন সত্য স্বীকার করিয়া ইংরেজি ২০২৩ সনের জন্য সনদপত্র নবায়ন করিতে বিনীত আবেদন জানাইতেছি৷ 

আপনার অনুগত 

দলিল লেখকঃ 

সনদ নং- 

সাব-রেজিস্ট্রি অফিস 

জামালপুর৷ 

ক্রমিক নং ১- এর বিবরণ 

(ক) দলিল লিখকের নাম 

(খ) পিতার নাম 

(গ) মাতার নাম 

(ঘ) জন্ম তারিখ /বয়স 

(ঙ) শিক্ষাগত যোগ্যতা 

ক্রমিক নং ২- এর বিবরণ 

(ক) সনদ পত্র নং 

(খ) সনদপত্র ইস্যু করার তারিখ 

(গ) সনদপত্র নবায়ন করার তারিখ 

ক্রমিক নং ৩- এর বিবরণ 

কত সংখ্যক দলিল লিখিয়াছে 

ক্রমিক নং ৪ এর বিবরণ 

দলিল লিখক রেজিস্টার সংরক্ষন করে কিনা 

ক্রমিক নং ৫ এর বিবরণ 

দলিল লিখক পক্ষগণকে রশিদ দেয় কিনা 

ক্রমিক নং ৬ এর বিবরণ  

দলিল লিখকের অফিসে উপস্থিতি নিয়মিত কিনা 

ক্রমিক নং ৭ এর বিবরণ 

দলিল লিখকের হস্তাক্ষর কেমন 

ক্রমিক নং ৮ এর বিবরণ 

রেজিস্ট্রির উদ্দেশ্যে আগত জন সাধারণের সহিত দলিল লিখকের আচরন কিরুপ ? 

ক্রমিক নং ৯ এর বিবরণ 

দলিল লিখক অফিসের শৃঙ্খলার প্রতি অনুগত / সহনশীল / উদ্ধত কিনা 

ক্রমিক নং ১০ এর বিবরণ 

দলিল লিখকের কার্যকলাপে অফিস সন্তুষ্ট কিনা 

দলিল লেখক সনদ নবায়ন আবেদন

(দ্রষ্টব্য - উপরের ক্রমিক নং গুলি ছবির মতো টেবিলে আকারে দিতে হবে ।)

দলিল লিখকের সনদ নবায়নের জন্য সুপারিশ করা হইল / সুপারিশ করা হইল না৷  


সাব-রেজিস্ট্রার 

জামালপুর ৷ 

ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url