নামজারী আবেদন বাতিল হলে করণীয়

নামজারী আবেদন বাতিল হলে করণীয়


অনেক সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ঘাটতি বা অসম্পূর্ন থাকায় নামজারী আবেদন না-মঞ্জুর বা বাতিল হয়ে যায় ৷ ফলে আবেদনটি সম্পূর্ন না হওয়ায় যাচাই বা শুনানীর আগেই নামজারী আবেদন বাতিল হলে এর বাতিলের কারণ যাচাই করে কোন ভুল থাকলে বা কাগজপত্র অসম্পূর্ন থাকলে তা সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করা যাবে ৷ 

নামজারী না-মঞ্জুর হলে কি করণীয়

(ক) শুনানী নিয়ে নামজারী আবেদন বাতিল হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর আদেশের বিরুদ্ধে ত্রিশ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর নিকট আপিল দায়ের করা যাবে৷ 

(খ) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) এর আদেশের বিরুদ্ধে ষাট দিনের মধ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) এর নিকট আপিল দায়ের করা যাবে ৷ 

(গ) অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) এর আদেশের বিরুদ্ধে নব্বই দিনের ভূমি আপিল বিভাগে আপিল দায়ে করা যাবে 

যে কর্মকর্তা রিভিউ আবেদনের আদেশ দিয়েছেন তার বরাবরে ত্রিশ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে হবে ৷ যদি আপিল হয়ে যায় তাহলে আর রিভিউ আবেদন করা যাবে না ৷ 

কি কি ভুলের কারনে নামজারী বাতিল হয়

নামজারী আবেদনে সচরাচর যে ভুল গুলো দেখা যায় আর যার কারনে নামজারী আবেদনটি বাতিল হয়ে যায় নিম্নে তা বর্ণনা করা হলোঃ- 

(১) নিম্নে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি বা কাগজপত্র অসম্পূর্ন থাকায় যেমন- 

(ক) অনলাইনে ই-নামজারী আবেদনের জন্য নির্ধারিত ফরমে স্বাক্ষরিত মূল আবেদন পত্র 

(খ) আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজ এক কপি ছবি একের অধিক আবেদনকারী হলে প্রত্যেকের এক কপি করে পাসপোর্ট সাইজ ছবি ৷ 

(গ) প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদন করা হলে প্রতিনিধির এক কপি ছবি 

(ঘ) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদ/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স / ভোটার আইডি এর সত্যায়িত ফটোকপি 

(ঙ)  সংশ্লিষ্ট খতিয়ান সমূহের ফটোকপি

(চ) বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা (খাজনা পরিশোধের রশিদ) 

(ছ) সর্বশেষ খতিয়ানের পর হইতে ভায়া দলিল বা দলিলের নকল কপির ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) 

উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিকানা হলে তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত ওয়ারিশ সার্টিফিকেট ৷ 

আদালতের রায় বা ডিক্রির মাধ্যমে সম্পত্তির মালিকানা লাভ করলে রায় ডিক্রির ফটোকপি৷ 

(২) ক্রয়কৃত জমির নামজারী আবেদনে ভুল: যেমন 

(ক) ক্রয়কৃত জমির দলিলের সাথে আবেদনকারীর নামের মিল না থাকলে  

(খ) আবেদনের সহিত দলিল দাতার নামের সাথে রেকর্ডকৃত মালিকের নামের মিল না থাকলে।

(গ) ভায়া দলিলের মাধ্যমে নামজারী করার ক্ষেত্রে দলিল গ্রহীতা এবং নামজারী প্রস্তাবে ভিন্ন গ্রহীতা থাকলে । 

(৩) ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমির নামজারী আবেদনে ভুল: যেমন 

(ক) নামজারী আবেদনে ওয়ারিশ সনদ সংযুক্ত না থাকলে ।  

(খ) অংশীদারি তথ্য গোপন করে ভূয়া ওয়ারিশ সনদ জমা দিলে 

(গ) ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তির মালিকানা বা দখল নিয়ে বিরোধ কিংবা আপত্তি থাকলে । 

এবং একাধিক ওয়ারিশভুক্ত জমি মালিকানা হস্তান্তরের জন্য দলিল দাতাগণের বন্টন নামা দলিল না থাকলে ও ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত হিস্যার চেয়ে বেশি জমি হস্তান্তর করা হলে  । 

এছাড়াও-

(১) খতিয়ান অনুযায়ী দাতা তার অংশের চেয়ে বেশি জমি হস্তান্তর করে থাকলে । 

(২) নামজারী আবেদনকৃত জমির কোন প্রকার চলমান মামলা থাকলে 

(৩) ভুল দলিলের মাধ্যমে অর্থাৎ দলিল খানায় খতিয়ান বা দাগ নম্বর ভুল থাকলে ।

(৪) খতিয়ান/পর্চায় ও দলিলে জমির শ্রেণীর ভিন্নতা থাকলে, অর্থাৎ খতিয়ানে এক রকম দলিলে আরেক রকম জমির শ্রেণী থাকলে । 

(৫) নামজারী আবেদনকৃত জমিতে সরকারি কোন স্বার্থ থাকলে । 

(৬) সর্বশেষ খতিয়ান/হাল রেকর্ড অনুযায়ী নামজারী আবেদন না করা হলে । 

(৭) নামজারী আবেদনকারীর ফোন নাম্বার সঠিক না থাকলে । 

(৮) অস্পষ্ট কাগজপত্র জমা দেয়া এবং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করে আবেদন করলে নামজারী আবেদন বাতিল হবে ।  

নামজারী করার জন্য ২৫ বৎসরের মালিকানা স্বত্ব প্রদান করতে হয় কিনা? 

নামজারী আবেদনের জন্য ২৫ বছরের মালিকানা স্বত্ব বাধ্যতা মূলক না । তবে সর্বশেষ সংশোধিত খতিয়ান খুলতে মালিকানার স্বত্ব পরিবর্তনের যথাযথ প্রমান ও ভায়া দলিল উপস্থাপন করা বাধ্যতা মূলক।

নামজারী ফি পরিশোধ পদ্ধতি

নামজারী আবেদন সাবমিট করার সময় পেমেন্ট অপশন দেখা যাবে । পেমেন্ট প্রদানের জন্য বিকাশ, নগদ, রকেট, ভার্চুয়াল কার্ড, যে কোন একটি অপশন ব্যবহার করে নামজারী আবেদন সাবমিট করতে  পারবেন । 

এমন কি আবেদন সাবমিট হওয়ার পর পরবর্তীতে ফি প্রদান করা যাবে তার  জন্য mutation.land.gov তে আবেদন নাম্বার ও জাতীয় পরিচয় নম্বর ব্যবহার করে আবেদন ট্র্যাকিং করে পেমেন্ট প্রদান করা যাবে । নামজারী আবেদনটি অনুমোদন হয়ে গেলে ডি,সি,আর ফি প্রদান করা যাবে।

অনলাইন নামজারী ফি কত টাকা

নামজারী করার জন্য সর্ব মোট ১১৭০/- টাকা প্রয়োজন হবে । যেমন - নামজারী আবেদন কোর্ট ফি বাবদ- ২০/- টাকা, নোটিশজারী ফি বাবদ- ৫০/- টাকা, খতিয়ান সরবরাহ ফি বাবদ- ১০০/- টাকা এবং রেকর্ড সংশোধন ফি বাবদ- ১০০০/- টাকা । 

ই-নামজারী আবেদনের সাথে কোর্ট ফি ও নোটিশজারী ফি বাবদ মোট- ৭০/- টাকা এবং নামজারী আবেদনটি অনুমোদনের পর বাকি ১১০০/- টাকা পরিশোধ করতে হবে । যা অনলাইনেই পরিশোধ করতে হবে । 

ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url