খাস জমি বন্দোবস্ত নীতিমালা ও নামজারী
প্রজাস্বত্ব আইনে ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ এর পর জমিদারগণ কিছু নির্দিষ্ট পরিমান জমি নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে রেখে অবশিষ্ট জমি গুলো সরকারের অওতাভুক্ত করা হয় যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক রেকর্ড বিহীন যে জমি গুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে আসছে
এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যা জেলা প্রশাসক বা ডিসি কালেক্টর ০১ নং খতিয়ান হিসাবে তত্ত্বাবধান করে থাকেন সেগুলো খাস জমি অন্তর্ভক্ত ।
খাস জমি কি
সাধারনত জেলা প্রশাসক বা ডিসি কর্তৃক সরকারী মালিকানাধীন জমি জমার কালেক্টর হিসেবে তত্ত্বাবধায়ন আর সরকারী মালিকানাধী খাস জমি কালেক্টরের নামেই রেকর্ড থাকে ৷
অন্যান্য সংস্থার জমি সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে সেগুলো খাস জমির অর্ন্তভুক্ত৷
খাস জমি যেই সংস্থার মালিকানায় থাকবে সেগুলো সেই সংস্থার জমি হিসেবে গন্য করা হয় ৷ যেমন রেলওয়ের জমি ৷ খাস জমির ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে হয় না ৷
কিন্তু কোন সংস্থার অধীনে ন্যস্ত থাকলে তাহলে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে হয় ৷
খাস জমি চেনার উপায়
প্রত্যেক মৌজার এর ১ নং খতিয়ানভুক্ত সম্পূর্ণ জমি খাস জমি হিসাবে পরিচিত ৷ পরিত্যাক্ত কৃষি জমি ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের বিধান বলে খাস করা হয়ে থাকে ৷
পয়স্তিভূমি, নদীতে বা সাগরে ভেঙ্গে যাওয়া জমি পুনরায় জেগে উঠলে এবং নদী বা সাগরে সরে যাওয়ার দরুন জেগে ওঠা ভূমি ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৮৭ ধারা মোতাবেক খাস জমি হিসাবে গণ্য হবে ৷
কোন হোল্ডিং বা ইহার অংশ বিশেষ (কৃষি বা অকৃষি যাই হোক) বকেয়া খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের জন্য ১৯১৩ সালের বেঙ্গল পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি এক্ট মোতাবেক দায়ের কৃত সার্টিফিকেট মামলায় নিলামকৃত ভূমি সরকার ক্রয় করলে সেই ভূমিও খাস জমি হিসাবে গণ্য হবে ৷
যে সব পরিবার বা সংস্থা প্রেসিডেন্টের আদেশ নং ৯৮/১৯৭২ এর ৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১০০ বিঘার অতিরিক্ত যে সমস্ত ভূমি সরকারের বরাবরে সমপর্ন করেছেন সেগুলি জমিও খাস জমি হিসাবে পরিগণিত হয়েছে ৷
প্রেসিডেন্টের আদেশ নং ৯৮/১৯৭২ এর ৩ অনুচ্ছেদ এর 'বি' উপ অনুচ্ছেদ এবং সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪, অধ্যাদেশ নং ১০/১৯৮৪ এর ৪ নং ধারার ৩ উপধারা লংঘন করে কোন মালিক বা সংস্থা ১০০ বিঘার ও ৬০ বিঘার অতিরিক্ত কৃষি ভূমি ক্রয় করলে উক্ত অতিরিক্ত জমি সরকারের খাস জমি হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হবে ৷
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে (১) এর গ উপ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে অবস্থিত প্রকৃত মালিকাবিহীন যে কোন সম্পত্তি উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পতিত ভূমি/খালি ভূমি বা খাস ভূমি হিসাবে গণ্য হবে ৷
খাস জমি বন্দোবস্ত
১৯৮৭ সালে, খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতি অনুসারে, বেশিরভাগ খাস জমি ভূমিহীনদের দেওয়া হয়েছিল এবং ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতি সামান্য সংশোধন করা হয়েছিল এবং ১৯৯৭ সালে, খাস জমি দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল।
(১) কৃষি খাস জমি
(২) অকৃষি খাস জমি
খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকারী কে?
কৃষি খাস জমি সাধারণত ভূমিহীনরা বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকারী তাই খাস জমি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী কারা ভূমিহীন বলে বিবেচিত হবে
সেসব পরিবারকে ভূমিহীন বলে গণ্য করা হবে :-
👉 বসতভিটা ও কৃষি জমি না থাকলেও পরিবারটি কৃষির ওপর নির্ভরশীল তারা ভূমিহীন বলে বিবেচিত হবে।
👉১০% পর্যন্ত বসতবাড়ি আছে কিন্তু কৃষির উপর নির্ভরশীল এমন কৃষি পরিবার কিন্তু কোনো চাষযোগ্য জমি না থাকলেও ভূমিহীন বলে বিবেচিত হবে ।
আবার কোনো উপজেলায় প্রচুর সংখ্যক ভূমিহীন পরিবার থাকতে পারে। ওই উপজেলায় পর্যাপ্ত খাস জমি না থাকায় সবাইকে একসঙ্গে জমি দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে
এবং জমি থাকলেও দেওয়ানি আদালতে মামলা-মোকদ্দমার কারণে মীমাংসা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সব শ্রেণির জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।
সরকার ভূমিহীনদের জন্য ভূমি বন্দোবস্ত অগ্রাধিকার দিতে নিম্নোক্তভাবে তালিকা প্রণয়ন করেছেন।
খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকার কে পায়?
👉 সবার আগে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার
👉 নদীভাঙ্গা পরিবার
👉একজন সক্ষম ছেলে সহ বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত পরিবার
👉 কৃষি জমি ও বসতভিটাহীন পরিবার
👉যে পরিবারগুলিতে ১০% শতাংশ পর্যন্ত বসতভিটা আছে, কৃষি জমি নেই কিন্তু কৃষির উপর নির্ভরশীল
👉 অধিগ্রহনের ফলে ভূমিহীন পরিবার ।
দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত সংক্রান্ত অকৃষি খাস জমি
(ক) কোনো ভূমিহীন ব্যাক্তি অকৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত পাবার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পাঁচ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে জমি বন্দোবস্তের জন্য আবেদন জমা দিতে পারেন।
জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য, একটি হলফনামা (অঙ্গীকার নামা) জমা দিতে হবে যে জমিটি যে উদ্দেশ্যে বন্দোবস্ত চাওয়া হয়েছে তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে না।
(খ) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদনটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উপজেলা ভূমি অফিসে পাঠাবেন ।
(গ) উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক সরেজমিনে পরিমাপ, তদন্ত ও নীতিমালা সাপেক্ষে জমি বন্দোবস্ত প্রদানের যোগ্য হলে জমির মূল্য নির্ধারণ করে স্কেস ম্যাপ,রেন্ট রোল ইত্যাদির সমন্বয়েএকটি প্রস্তাব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করার পর তা যথাযথ কি-না পরীক্ষান্তে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
খাস জমি কি নামজারী করা যায়?
যে সমস্ত জমি ভূমি মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন সরকারের পক্ষে কালেক্টর তত্ত্বাবধায়ন করেন এমন জমি গুলোই খাস জমি ৷
খাস জমি ক্রয় বিক্রয় হস্তান্তর করা যায় না বিধায় খাস জমি নামজারী করা যায় না ৷
তবে সরকার খাস জমি স্থায়ীভাবে কাউকে বন্দোবস্ত দিলে অর্থাৎ কবুলিয়ত নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে দিলে তার নামে নামজারী করা যায় ৷
তৎপর স্থায়ী বন্দোবস্তকৃত খাস জমি উত্তরাধীকার সূত্রে নামজারী করা যায়, আবার সরকার ভূমিহীনদের মাধে খাস জমি বন্টন করে থাকে সেগুলিও উত্তরাধীকার সূত্রে নামজারী করা যায় ৷
এবং স্থায়ীভাবে বন্দোবস্তকৃত খাস জমি অধিগ্রহণ সূত্রে মালিকানা পরিবর্তন হলেও সেই খাস জমি নামজারী করা যায় ৷