মেয়েরা পিতার সম্পত্তির কিভাবে অংশ পাবে?

মেয়েরা পিতার সম্পত্তির কিভাবে অংশ পাবে?

উত্তরাধীকার কি, উত্তরাধীকার আইন কি, এ সম্পর্কে অনেকেই ধারনা রাখতে চাইনা, কিন্ত উত্তরাধীকার সম্পর্কে জ্ঞান রাখা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব,তাই আসুন প্রথমেই জেনে নেয়া যাক--

উত্তরাধীকার কি?

একজন ব্যক্তি মৃত্যুবরন করার পর তার দাফন কার্যাদি থেকে শুরু অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্থ হয়ে মারা যান তবে তার ঋণ পরিশোধ করা, মৃত ব্যক্তি যদি তার জীবদ্দশায় কাউকে সম্পত্তি দান বা অছিয়ত করার মনস্থ করে থাকেন তবে তার দান অছিয়ত সম্পন্ন করার পর মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে যে সকল ওয়ারিশ অংশীদার হবেন তাকেই উত্তরাধীকার বলে৷

উত্তরাধীকার আইন কি?

মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তিকে একটি নির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে তার পরবর্তী ওয়ারিশগণের মাঝে প্রত্যেকের প্রাপ্য হিস্যা অনুযায়ী সম্পত্তি বন্টন করাই হলো উত্তরাধীকার আইন৷ 

আজ আমরা জানবো মৃত ব্যক্তির যদি শুধুমাত্র কন্যা সন্তান থাকে তাহলে কিভাবে পিতার সম্পত্তির মালিক হবে ৷

একমাত্র কন্যা সন্তান কিভাবে সম্পত্তি পায়

মুসলিম আইনে একজন মৃত ব্যক্তির যদি কোন পুত্র সন্তান না থাকে এবং একমাত্র কন্যা সন্তান থাকলে তাহলে মোট সম্পত্তির অর্ধেক ভাগ পাবে একমাত্র কন্যা ৷ যেমন মোট সম্পত্তি যদি হয় ৬০ শতাংশ, তাহলে একমাত্র কন্যা পাবে .৫০০ হিস্যায় ৩০ (ত্রিশ) শতাংশ ৷ 

আর যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বেঁচে থাকেন তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির আটের একভাগ অংশ পাবেন স্ত্রী ৷ অর্থাৎ স্ত্রীর অংশের .১২৫ হিস্যায় ৭.৫০ (সাড়ে সাত) শতাংশ জমি বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট ৫২.৫০ (সাড়ে বায়ান্ন) শতাংশ জমির অর্ধেক ২৬.২৫ (সোয়া ছাব্বিশ) শতাংশ জমি পাবে একমাত্র কন্যা। অবশিষ্ট সম্পত্তি মুসলিম ফারায়েজ মোতাবেক মৃত ব্যক্তির বাবা, মা, ভ্রাতা, ভগ্নি, ভাতিজারা একটি নির্দিষ্ট হিস্যানুযায়ী অংশীদারী হবেন । 

একাধিক কন্যা সন্তান কিভাবে সম্পত্তি পায়

একজন মৃত ব্যক্তির যদি কোন পুত্র সন্তান না থাকে এবং একাধিক কন্যা সন্তান থাকলে তাহলে মোট সম্পত্তির তিনের দুই (৩/২) অংশ ভাগ পাবে কন্যাগণ ৷ যেমন মোট সম্পত্তি যদি হয় ৬০ শতাংশ, তাহলে কন্যাগণ পাবে তিনের দুই (৩/২) অংশ= ৪০ (চল্লিশ) শতাংশ, যেমন কন্যা যদি হয় ৪ জন তাহলে প্রতি কন্যা .২৫০ হিস্যায় ১০ (দশ) শতাংশ করে পাবেন ।

আর যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বেঁচে থাকেন তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির আটের একভাগ অংশ  অর্থাৎ স্ত্রীর অংশের .১২৫ হিস্যায় ৭.৫০ (সাড়ে সাত) শতাংশ জমি বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট ৫২.৫০ (সাড়ে বায়ান্ন) শতাংশ জমি তিনভাগ করতে হবে একভাগ= ১৭.৫০ (সাড়ে সতের) শতাংশ, এর দুইভাগ অর্থাৎ তিনের দুই অংশ= ৩৫ শতাংশ ভাগ পাবে কন্যাগণ 

যেমন কন্যা যদি হয় ৪ জন তাহলে প্রতি কন্যা .২৫০ হিস্যায় ৮.৭৫ (পৌনে নয়) শতাংশ করে পাবেন । 

অবশিষ্ট ১৭.৫০ (সাড়ে সতের) শতাংশ সম্পত্তির মালিক হবেন মৃত ব্যক্তির বাবা, মা, ভ্রাতা, ভগ্নি, ভাতিজারা ।

[ এখন পিতা যদি জীবিত থাকাবস্থায় তার কন্যাদের নামে সম্পত্তি দলিল করে দেন তাহলে অন্য কেউ দাবি করতে পারবেনা ]  

মৃত ব্যক্তির পিতা কিভাবে সম্পত্তি পাবেন- মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র ও কন্যা থাকলেও পিতা ১/৬ অংশ পেয়ে থাকেন এক্ষেত্রে মৃত ব্যাক্তির পুত্র, কন্যাদের অংশ বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট জমি হইতে পিতা ১/৬ অংশ পাবেন ।

মৃত ব্যক্তির মাতা কিভাবে সম্পত্তি পাবেনমৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র ও কন্যা থাকলেও মাতা ১/৬ অংশ পেয়ে থাকেন, তবে মৃত ব্যক্তির অন্য কোনো ভাই বা বোন না থাকলে মাতা ১/৩ অংশ পেয়ে থাকেন

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সূরা আন নিসা-র ১১ নং আয়াতের তাৎপর্য অনুযায়ী 

(১) একজন ভাই দুই বোনের সমান অংশীদারী হবে৷ 

(২) শুধুমাত্র একজন কন্যা সন্তান থাকলে সে মোট সম্পত্তির অর্ধেক অংশীদারী হবে ৷ 

(৩) দুইজনের অধিক কন্যা থাকলে তারা মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশের অংশীদারী হবে ৷ 

(৪) মৃত ব্যক্তির পিতা, মাতা উভয়েই ১/৬ অংশের অধিকারী হবে যদিও পুত্র সন্তান থাকে৷ 

(৫) মৃতের পুত্র সন্তান না থাকলে মাতা ১/৩ অংশের অধিকারী হবে ৷ 

(৬) মৃত ব্যক্তির কয়েকজন ভাই থাকলে মাতা ১/৬ অংশের অধিকারী হবে৷ 

এবার 

সূরা আন নিসা-র ১২ নং আয়াতের তাৎপর্য অনুযায়ী 

(১) স্বামী তার মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অর্ধেক অংশ পাবে যদি কোন সন্তান না থাকে ৷ 

(২) মৃত স্ত্রীর সন্তান থাকলে ১/৪ অংশ পাবে স্বামী ৷ 

(৩) এবং মৃত স্বামীর অংশ হইতে ১/৪ অংশ পাবে স্ত্রী যদি কোন সন্তান না থাকে ৷ 

(৪) মৃত স্বামীর সন্তান থাকলে ১/৮ অংশ পাবে স্ত্রী ৷ 

(৫) মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, পুত্র, পিতা না থাকলে যদি এক ভাই ও এক বোন থাকে তাহলে তারা ১/৬ অংশ করে পাবে ৷ 

(৬) এমনকি ততোধিক ভাই, বোন থাকলে ১/৩ অংশ হারে বন্টন হইবে ৷ 

অন্যান ওয়ারিশ--

* সৎ পুত্র, কন্যা সৎ পিতা বা সৎ মাতার সম্পত্তির অংশ পায় না ৷ 

* একই রকম সৎ পিতা কিংবা সৎ মাতা সৎ পুত্র-কন্যার সম্পত্তি পায় না ৷ 

* স্বামী- স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কেউ কারোর সম্পত্তির অংশীদারী হবে না ৷ 

* কেউ কাউকে হত্যা করলে কোন হত্যাকারী ব্যক্তি তার সম্পত্তির অধিকারী হতে পারে না৷ 

* কোন জারজ সন্তান তার মাতা ও মাতার আত্মীয়দের সম্পত্তিতে সাধারণ নিয়মেই অংশীদারী হবেন ৷ 

* কোন ব্যক্তি উত্তরাধীকার বিহীনভাবে মারা গেলে এবং তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় সম্পত্তির সঠিক ব্যবস্থা না করে গেলে সরকার তার সম্পত্তির মালিক ও উত্তরাধীকারী হবেন৷ 

ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url