প্রবাস থেকে কি জমি ক্রয়-বিক্রয় করা যায়?
প্রবাস থেকে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের পদ্ধতি |
আমাদের অনেক প্রবাসী ভাই-বোন, বন্ধু আছেন, যারা প্রবাসে থেকেও দেশের মাটিতে নিজের নামে জমি ক্রয় করতে চান৷ আসলেই কি সম্ভব?
হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি একজন প্রবাসী হয়েও সঠিক আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের নামে জমি ক্রয় করতে পারবেন খুব সহজ উপায়ে ৷
তার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ হলোঃ জমি ক্রয়ের পূর্বে আপনাকে কিছু পদ্ধতি অনুসরন করা জরুরী
প্রবাস থেকে জমি ক্রয়ের পদ্ধতি
(১) জমি কেনার আগে আপনাকে অবশ্যই সেই এলাকার বর্তমান বাজার মূল্য কেমন তা জানা দরকার, সেটা আপনার বিশ্বস্ত নিকটতম আত্মীয়র মাধ্যমেও খোজ খবর নিতে পারবেন ৷
(২) আবার কোন লোভনীয় বিজ্ঞাপনের খপ্পরে পরে দালালের মাধ্যমে জমি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকবেন ৷ এতে আপনার কস্টার্জিত অর্থ বিফলে যাবার সম্ভাবনা থাকবে ৷
(৩) জমি কেনার জন্য আপনার নিকটতম আত্মীয় বা বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তি বাছাই করুন ৷ তার মাধ্যমে জমি বিক্রেতা বা দাতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ভালোভাবে যাচাই করতে হবে, জমি নিয়ে কোন বিরোধ বা মামলা মোকদ্দমা আছে কিনা জানতে হবে ৷ সব কিছু ঠিক থাকলে জমি ক্রয়ের উপযোগী হবে ৷
আবারো বলছি, এমন বিশ্বস্ত ব্যক্তি বেছে নিন ৷ নয়তো বা দেখা যাবে জমিটি আপনার নামে ক্রয় না করে অন্যের নামে ক্রয় করা হয়েছে গেছে৷ তখন দেশে এসে আফসোস করতে হবে ৷
(৪) জমি ক্রয় করার জন্য সঠিক মূল্য নির্ধারিত হলে, আপনার প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র যেমন- জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে ৷
(৫) এর পর আপনার বিশ্বস্ত সেই ব্যক্তি একজন দক্ষ দলিল লেখক বা আইনজীবির মাধ্যমে দলিল সম্পাদন করবেন ও উপস্থিত থাকবেন ৷
(৬) এখন যিনি দাতা অর্থাৎ জমি বিক্রয় করবেন তার সকল কাগজপত্র জমির মালিনাকা পর্চা, নকশা, ওয়ারিশ সনদ, ভায়া দলিল যদি থাকে ভায়া দলিল সমূহ, নামজারী খতিয়ান, হাল সনের খাজনা পরিশোধের দাখিলা অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে ৷
উপরোক্ত কাগজপত্র উপস্থাপনের পর দলিল লেখক আইজীবি দলিল প্রস্তুত করে সম্পাদন করবেন এবং সাব- রেজিস্ট্রী অফিসে সাব রেজিস্ট্রার বরাবর দলিল দাখিলের মাধ্যমে আপনার নামে জমি রেজিস্ট্রী করবেন ৷
দ্রষ্টব্যঃ যেহেতু আপনি একজন প্রবাসী তাই আপনার ক্রয়কৃত জমি সিটি করর্পোরেশন বা পৌরএলার হলেও টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হবে না ৷
প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি
একজন প্রবাসী যদি তার নামীয় বা ক্রয় সূত্রে মালিকানাধীন জমি বিক্রয় করতে চান তাহলে প্রথমে কাউকে উক্ত জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে ৷
তার জন্য বিক্রয় দাতার পক্ষে একজন আমমোক্তার নিযুক্ত করতে হবে ৷ আমমোক্তার জমি বিক্রয়ের ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করতে পারবেন৷
কিভাবে আমমোক্তার নিযুক্ত করবেন?
আমমোক্তার নিযুক্ত করার জন্য একজন বিশ্বস্ত নিকটতম আত্মীয় নির্বাচন করাই ভালো ৷ এবং একজন দক্ষ দলিল লেখক বা আইনজীবির মাধ্যমে দলিল সম্পাদনের কাজ সহজ হবে৷
আমমোক্তার নিযুক্তির ধাপ সমূহঃ
১- বিশ্বস্ত একজন আমমোক্তার নিযুক্তির পর তার মাধ্যমে একজন দক্ষ দলিল লেখক বা আইনজীবির দ্বারা পাওয়ার অব অ্যাটর্নী বা আমমোক্তার নামা দলিল প্রস্তুত করতে হবে ৷ তার জন্য প্রথমে প্রয়োজনীয় তথ্য সমূহ হলো পাওয়ার দাতা ও গ্রহীতার ঠিকানা ও বিস্তারিত বিবরন, জমির পরিমান ও অবস্থান ৷
২- পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিল প্রস্তুত হয়ে গেলে পাওয়ার গ্রহীতার জাতীয় পরিচয় বা পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ দলিল খানা পাওয়ার দাতা প্রবাসীর ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠাতে হবে ৷
৩- পাওয়ার দাতা উক্ত দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে যাবেন ৷
৪- তার পর বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কাউন্সিলরের সামনে পাওয়ার দাতা পুরো দলিলে স্বাক্ষর করবেন এবং পাওয়ার গ্রহীতার জাতীয় পরিচয় পত্র ও ছবি সনাক্ত করবেন ৷ এরপর প্রয়োজনী কাজ শেষে দলিল খানা ডাকযোগে পুনরায় দেশে পাঠাবেন ৷
৫- পাওয়ার গ্রহীতা ডাক হতে দলিল সংগ্রহ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবেন, পররাষ্ট্র দলিল খানা যাচাই করে দলিলটি সত্যায়িত করে দেবেন ৷
৬- এর পর পাওয়ার গ্রহীতা দলিলটি নিয়ে ডিসি অফিসের রাজস্ব কার্যালয়ে যাবেন, সেখানে দলিলে আঠাযুক্ত প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প লাগিয়ে দলিলের কপি সাব রেজিস্ট্রী অফিসে পাঠিয়ে দিবেন ৷
৭- সাব রেজিস্ট্রার বরাবর দলিল দাখিলের পর দলিলটি রেজিস্ট্রি করবেন ৷
৮- পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিল রেজিস্ট্রীর পর পাওয়ার গ্রহীতা দলিলের শর্তানুযায়ী যাবতীয় হস্তান্তরের মালিক/ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন এবং জমি বিক্রয় করতে পারবেন ৷
সুতরাং বুঝা গেল পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিলের শর্ত অনুযায়ী পাওয়ার গ্রহীতা সর্বচ্চো ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে জমি বিক্রয় করবেন, যেন বিক্রয়কৃত দলিলটি পাওয়ার দাতার দ্বারা সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রী কার্য সম্পন্ন হয়েছে ৷