ফ্ল্যাট ভাড়া চুক্তি পত্র

ফ্ল্যাট ভাড়া চুক্তি পত্র


প্রচলিত আইন অনুযায়ী ভাড়া চুক্তিটি ভাড়াটিয়া এবং মালিক পক্ষ উভয়ের জন্যই নিরাপদ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরাঞ্চলে কর্মচারী, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ভাড়ায় বসবাস করে। এসব ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া ও মালিক পক্ষের বিরোধের কথা শোনা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাড়া নিয়ে ভাড়াটিয়া- মালিক পক্ষের দ্বন্দ্ব এমনকি মামলা পর্যন্ত গড়ায়। তাই উভয় পক্ষের আলোচনায় উভয়ের উপযোক্ত শর্তে ফ্ল্যাট ভাড়া চুক্তি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ভাড়ার চুক্তিপত্র কেন প্রয়োজন? 

ফ্ল্যাট ভাড়া চুক্তিপত্র সম্পাদন বা রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে মালিক পক্ষ যেমন ভাড়াটিয়ার সাথে বেআইনি কিছু করা থেকে বিরত থাকবেন, তেমনি ভাড়াটিয়াও বেআইনি কাজ করা থেকে সতর্ক থাকবেন। ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তি না থাকলে, ভাড়াটিয়া ফ্ল্যাটে থাকার সময় যদি জঙ্গিবাদ, মাদক, খুন-ধর্ষণ-এর মতো কোনো বেআইনি কাজ করে থাকে, তাহলে আইনগতভাবে মালিক পক্ষ প্রথমে প্রশাসনের কাছে ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তিপত্র দেখাতে পারবেন।

ভাড়াটিয়া চুক্তি থাকলে, ভাড়াটিয়া নিয়মিত ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে বা ফ্ল্যাটে অবৈধ কার্যকলাপ করলে বা ফ্ল্যাট দখল করতে চাইলে মালিক পক্ষ ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। একইভাবে, ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তি থাকলে, মালিক পক্ষ ভাড়াটিয়ার সঙ্গে অন্যায় বা অন্যায় আচরণ করতে পারে না। যেমন- মালিক পক্ষ চাইলেই তার ইচ্ছামতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারে না। 

একজন মালিক পক্ষ ইচ্ছামত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে পারেন না। যদি চুক্তি থাকে, ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালা কিছু ভুল করলে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।

ভাড়ার চুক্তিপত্র কিভাবে লেখা হয়?

ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ৩০০/- টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প দিয়ে করতে হবে। প্রয়োজনে চুক্তি রেজিস্ট্রি করতে হবে। এটি ভাড়াটিয়া এবং মালিক পক্ষ উভয়ের জন্যই অবাঞ্ছিত ঝামেলা এড়ায়।

ফ্ল্যাট ভাড়া চুক্তিপত্রের নমুনা 

(বর্তমানে কম্পিউটার কম্পোজার মাধ্যমে চুক্তিপত্র লেখা হয়ে থাকে, একজন সনদ প্রাপ্ত দলিল বা উকিল চাইলে হাতেও লিখতে পারেন)

প্রথম পক্ষ (মালিক) : 

মোঃ আসলাম হোসেন, পিতার নাম : মরহুম আবেদ আলী সরকার, মাতার নাম: মোসাঃ জোবেদা খানম, জন্ম তারিখঃ ০১/০৫/১৯৭৬ ইং, জাতীয় পরিচয় পত্র: ৪৫৪৫১৪৫৫৫১, ধর্ম: ইসলাম, পেশা: ব্যবসা, জাতীয়তা: বাংলাদেশী, স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রামঃ পাথালিয়া, পোঃ জামালপুর, উপজেলাঃ জামালপুর সদর, জেলাঃ জামালপুর। 

-------------------------- প্রথম পক্ষ (মালিক)



দ্বিতীয় পক্ষ (ভাড়াটিয়া) : 

মোঃ আবুল কালাম আজাদ, পিতার নাম : মোঃ খলিলুর রহমান, মাতার নাম: মৃত আসিয়া বেগম, জন্ম তারিখঃ ২৬/০৩/১৯৮৬ ইং, জাতীয় পরিচয় পত্র: ৬৫৯৮৭৪৫২৩১৪২, ধর্ম: ইসলাম, পেশা: চাকুরী, জাতীয়তা: বাংলাদেশী, স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রামঃ ফুলবাড়ীয়া, পোঃ ফুলবাড়ীয়া, উপজেলাঃ ফুলবাড়ীয়া, জেলাঃ ময়মনসিংহ । 

------------------- দ্বিতীয় পক্ষ (ভাড়াটিয়া)


পরম করুণাময় মহান সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরন করিয়া অত্র ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তিপত্র দলিলের আইনানুগ বয়ান লেখা আরম্ভ করিলাম । যেহেতু আমি প্রথম পক্ষ নিম্ন তফসিল বর্ণিত বাড়ির মালিক ও দখলকার নিয়ত থাকিয়া ভোগদখল করিয়া আসিতেছি । আমি প্রথম পক্ষ মালিক তাহা মাসিক ভাড়ায় ভাড়া প্রদানের প্রস্তাব করিলে আপনি দ্বিতীয় পক্ষ তাহা ভাড়া লইতে ইচ্ছুক হওয়ায় আমাদের উভয় পক্ষের আলোচনা ও সমঝোতার প্রেক্ষিতে আমরা উভয় পক্ষ নিম্ন লিখিত শর্তাবলি মানিয়া লইয়া অত্র ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তিপত্র দলিল সম্পাদন করিলাম ।


শর্তাবলীঃ 

১। অত্র ফ্লাট ভাড়ার চুক্তি পত্র অদ্য ১৫/০৬/২০২৩ ইং তারিখ হইতে আগামী ৩০/০৬/২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত ০১ (এক) বছরের জন্য ভাড়ার চুক্তি বলবৎ থাকিবে । 

২। প্রথম পক্ষ চুক্তিকালীন সময়ে দ্বিতীয় পক্ষের নিকট হইতে অগ্রিম জামানত বাবদ ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা বুঝিয়া পাইয়া দ্বিতীয় পক্ষকে ফ্ল্যাটের দখল বুঝাইয়া দিবেন । 

৩। প্রকাশ থাকে যে, দ্বিতীয় পক্ষ/ ভাড়াটিয়া উল্লেখিত নির্ধারিত মেয়াদান্তে ফ্ল্যাটটি ছাড়িয়া দিতে মনস্থ করিলে তাহার জামানতের ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকার প্রাপ্তি রশিদের (দ্বিতীয় পক্ষ তাহার প্রদানকৃত টাকা বুঝিয়া পাইয়াছে মর্মে) মাধ্যম প্রথম পক্ষ ফেরৎ দিতে বাধ্য থাকিবে । অগ্রিম প্রদানকৃত টাকা হইতে ভাড়া বাবদ কোনোরূপ টাকা কর্তন হইবেনা ।

৪। ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ১২,০০০/- (বারো হাজার) টাকা নির্ধারণ করা হইয়াছে। প্রতি মাসের ভাড়ার টাকা পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে দ্বিতীয় পক্ষ প্রথম পক্ষের নিকট পরিশোধ করিবেন। প্রথম পক্ষ উক্ত ভাড়া প্রাপ্ত হইয়া দ্বিতীয় পক্ষ কে ভাড়া প্রাপ্তির রশিদ প্রদান করিবেন। 

৫৷ অত্র ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তির মেয়াদকালের মধ্যে ফ্ল্যাটের কোন প্রকার ক্ষতি সাধিত হইলে ফ্ল্যাট ছাড়িবার সময় দ্বিতীয় পক্ষ নিজ খরচে উহা মেরামত করিয়া দিতে বাধ্য থাকিবেন ৷ যদি মেরামত করিয়া না দেন তবে জামানতের টাকা হইতে প্রথম পক্ষ কাটিয়া রাখিয়া বাকি টাকা এককালিন ফেরত প্রদান করিবেন৷ 

৬৷ দ্বিতীয় পক্ষ ফ্ল্যাটের সৌন্দর্যের জন্য প্রয়োজনীয় ডেকোরেশন দরকার মনে করিলে তাহা আলোচনা সাপেক্ষে নিজ খরচায় করিবেন ৷ ইহা ফ্ল্যাটের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হইলে দ্বিতীয় পক্ষ নিজ খরচে মেরামত করিয়া দিতে বাধ্য থাকিবেন ৷ 

৭৷ দ্বিতীয় পক্ষ ভাড়াটিয়া তফসিল বর্ণিত ফ্ল্যাটে কোন অবৈধ বা অসামাজিক কার্যকলাপ করিতে পারিবেন না ৷ অবৈধ কোন কার্য করিলে তাহার জন্য দ্বিতীয় পক্ষ দায়ী থাকিবন এবং অত্র ফ্ল্যাট হইতে উচ্ছেদযোগ্য হইবেন ৷ 

৮৷ বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস ও পানি বিল মালিক পক্ষ বহন করিবেন৷ 

৯৷ প্রথম পক্ষ বিশেষ কোন প্রয়োজনে তিন মাসের অগ্রিম নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পক্ষের নিকট হইতে ফ্ল্যাট ছাড়িয়া লইবার অধিকার সংরক্ষন করবেন এবং দ্বিতীয় পক্ষ বিশেষ প্রয়োজনে ফ্ল্যাট ছাড়িয়া দিতে চাইলে সেক্ষেত্রে অগ্রিম নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে একই অধিকার সংরক্ষন করিবেন ৷ এই ক্ষেত্রে কেহ কোন প্রকার ক্ষতি পূরণ দাবি করিতে পারিবেন না ৷ 

১০৷ চুক্তি চলাকালিন সময়ে যদি ফ্ল্যাটের কোন কিছু (যেমন- বার্থরুম, ফিটিংস, জানালার গ্লাস, গ্রীল ইত্যাদি) ক্ষতি হয় তাহা দ্বিতীয় পক্ষ/ ভাড়াটিয়া নিজ খরচায় ঠিক করিয়া দিবেন ৷ 

১১৷ দ্বিতীয় পক্ষ চুক্তির মেয়াদকালে ফ্ল্যাট বর্ধিত করণ বা সংরক্ষন অথবা অন্য কাহাকেও উক্ত ফ্ল্যাট ভাড়া বা সাবলেট/ উপ-ভাড়া দিতে পারিবেন না ৷ 

১২৷ প্রথম পক্ষ/ মালিক এবং দ্বিতীয় পক্ষ/ ভাড়াটিয়ার মধ্যে যদি ভবিষ্যতে কোনরুপ মতবিরোধ দেখা যায় তবে উভয় পক্ষ একত্রে বসিয়া তাহা মীমাংসা করিবেন৷ 

১৩৷ প্রথম পক্ষ যে অবস্থায় দ্বিতীয় পক্ষকে ফ্ল্যাট বুঝাইয়া দিয়াছেন মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় পক্ষ প্রথম পক্ষকে সেই অবস্থায় উক্ত ফ্ল্যাট হস্তান্তর করিতে বাধ্য থাকিবেন৷ 

১৪৷ অত্র চুক্তিপত্রে যে সকল শর্ত উল্লেখ করা হয় নাই তাহা দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক আমরা উভয় পক্ষ মানিয়া চলিতে বাধ্য থাকিব৷ 

তফসিল 

জেলাঃ জামালপুর, থানাঃ জামালপুর সদর অধীন মৌজাঃ সিংহজানী এর মধ্যে সিংহজানী হাইস্কুল রোড সংলগ্ন মেইন রোড এর পূর্ব পাশ্বে---------- 

আমরা উভয় পক্ষ অত্র চুক্তিপত্র পড়িয়া উহার মর্ম সম্যক অবগত হইয়া স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ্য মস্তিস্ক অন্যের বিনা প্ররোচনায় নিম্ন স্বাক্ষীগণের মোকাবেলায় অত্র চুক্তিপত্র দলিলে আমাদের নিজ নিজ নাম স্বাক্ষর করিলাম ৷ 


স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষরঃ 

১।---------------

২।----------------

৩।----------------


প্রথম পক্ষের স্বাক্ষর                                      দ্বিতীয় পক্ষের স্বাক্ষর 

 

ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url