বিভিন্ন খতিয়ান পরিচিতি

খতিয়ান পরিচিতি

খতিয়ান পরিচিতি

খতিয়ান ফার্সি শব্দ। খত বা লেখা থেকে খতিয়ান শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। মূলত খতিয়ান ভূমি মালিকের রেকর্ড।

সিএস জরিপ/খতিয়ান (Codastral Servey/khatian) ১৮৮৮-১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ সার্বিক ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে: Codastral Servey কে সংক্ষেপে সিএস খতিয়ান (জরিপ) বলে। এ জরিপে দেশের সকল জমির উপর বিশদভাবে নকশা প্রণয়ন এবং যেখানে প্রত্যেক মালিকের জন্য একটি দাগ নম্বর করে খতিয়ান তৈরি করা হয়। সি এস খতিয়ান (জরিপ) ১৮৮৮ সালে (সাবেক চট্টগ্রাম জিলা) বর্তমান কক্সবাজার জিলার অন্তর্গত রামু উপজেলা থেকে শুরু হয়ে ১৯৪০ সালে দিনাজপুর জেলায় শেষ হয়।

তবে বৃহত্তর সিলেট জিলা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জিলায় সিএস জরিপ পরিচালিত হয়নি ।

সিএস জরিপকালিন সময়কাল: ১৮৮৮-১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ

সিএস জরিপের পরিচালনা পদ্ধতি: সমস্ত জরিপ প্রক্রিয়াটি কিস্তোয়ার পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। সম্পূর্ণ নতুন খতিয়ান বা পর্চা এবং ম্যাপ তৈরি হয়।

সাক্ষ্যগত মূল্য: ১০০% জমি সরেজমিনে নির্ভুল জরিপ করে খতিয়ান তৈরি করা হয়। বলে বর্তমানে এর সাক্ষ্যগত মূল্য গ্রহণযোগ্যতা অনেক।

সিএস খতিয়ান/পর্চা চেনার সহজ উপায়

১। এই পর্চা একশতভাগ প্রিন্টেড বা মুদ্রিত এবং উপর-নিচে লম্বালম্বি থাকে। তবে সার্টিফাইড পর্চা হস্তলিখিত।

২। এই পর্চার প্রথম পৃষ্ঠায় উপরে "পরগণা" কথাটি লেখা আছে। উল্লেখ্য পরগণা জমিদারী ব্যবস্থায় এক ধরনের জমিদারী ইউনিট ছিল।

৩। এই পর্চায় প্রজা বা রায়তদের স্ব স্ব হিস্যা/অংশ আলাদা আলাদাভাবে উল্লেখ

৪। এই পর্চার উপরের অঙ্কে জমিদারের পরিচয় ও জমিদারীর নাম ও ১ (ষোল আনা) অংশ উল্লেখ থাকে এবং নিচের অঙ্কে অধিনস্ত প্রজা বা রায়তের আলাদা আলাদা হিস্যা অংশ সহ ১ ষোল আনা মিলানো থাকে।

৫। এই পর্চা উভয় পৃষ্ঠা সম্বলিত এবং অপর পৃষ্ঠায় অংশ জমির রকম কলামের পাশে উত্তর সীমানার মালিকের নাম উল্লেখ থাকে।

৬। এই পর্চার প্রথম পৃষ্ঠার নিচের অঙ্কে সর্বশেষ কলামে জোত মালিকের নাম ও কোনো ধরনের রায়ত তার উল্লেখ থাকে। যেমন জোত... রায়ত স্থিতিবান ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। 

সি এস খতিয়ানের নমুনা

খতিয়ান পরিচিতি

আর এস জরিপ/খতিয়ান (Rivisional Survery/Khatian) ১৯২৪-১৯৪৯ খ্রি.

আরএস খতিয়ান (Rivisional Khatian): পূর্বের কোনো জরিপ কাজের সংশোধন করে যে জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয় তাকে Revisional Survey বা আরএস অথবা সংশোধনী জরিপ বলা হয়। প্রয়োজনের খাতিরেই সেটেলমেন্ট নকশা ও রেকর্ডগুলো ১৫ থেকে ৩০ বছর পরপর সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়।

আরএস জরিপের কারণ:

১। পূর্ববর্তী জরিপ এর ভুল ত্রুটি সংশোধন।

২। জমির দখল ও মালিকানা পরিবর্তন বা হালনাগাদকরণ।

আরএস জরিপকালিন সময়কাল: ১৯২৪-১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ।

আরএস জরিপের পরিচালনা পদ্ধতি: পূর্ববর্তী সিএস নকশার উপর ভিত্তি করে আরএস জরিপ পরিচালিত হয়। কিস্তোয়ার না করেও কেবলমাত্র ব্লু-প্রিন্টের উপর প্লট করে সংশোধন করা হয়।

সাক্ষ্যগত মূল্য: রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৪ ধারা ও প্রজাস্বত্ব বিধিমালা মোতাবেক প্রণীত হয় আরএস খতিয়ান। আর এস খতিয়ানের সাক্ষ্যগত মূল্য ১৪৪ (ক) ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ধারা অনুযায়ী প্রণীত খতিয়ানগুলো অবশ্যই সঠিক বলে ধরে নিতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত সাক্ষ্য দ্বারা এগুলো ভুল প্রমাণীত না হয়। সিএস খতিয়ানের মতই আরএস খতিয়ানের সাক্ষ্যগত মূল্য প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে উক্ত আইনের বিধান মোতাবেক প্রণীত সংশোধিত খতিয়ানগুলো একই রকম সাক্ষ্যগত মূল্য বহন করবে।

আরএস খতিয়ান/পর্চা চেনার সহজ উপায়:

১। এই পর্চা প্রিন্টেড এবং প্রত্যেক অংশীদারের হিস্যা অংশ আলাদা আলাদা করে

নির্ধারণ করে দেয়া আছে।

২। এতে অঙ্কের কলাম ও রাজস্ব কলাম পাশাপাশি অবস্থান করে।

৩। ১৯৮২ সালের পর এই পর্চায় থানা কথাটির পাশাপাশি উপজেলা কথাটি লেখা রয়েছে।

৪। এই পর্চা আড়াআড়ি বা খাড়াখাড়ি উভয় প্রকারের পাওয়া যায়।

৫। এতে আড়াআড়ি পর্চাটি এক পৃষ্ঠা সম্বলিত এবং আড়াআড়ি পর্চাটি উভয় পৃষ্ঠা সম্বলিত।

৬। আরএস খতিয়ান উপরে নীচে লম্বা।

৭। আরএস খতিয়ানের ১ম পৃষ্ঠার নিচে বাম দিকে ১০৫/১০৬/১০৮/১০৯ ধারামতে খতিয়ান দাগ নং-এ কথাগুলো লেখা থাকে।

৮। প্রথম পৃষ্ঠার উপরে জিলা, মৌজা এবং খতিয়ান নং লেখা থাকে। তবে এই খতিয়ান নং-এ কেবল একটা নাম্বারই লেখা থাকে।

৯। আরএস খতিয়ানের ২য় পৃষ্ঠায় দাগ নং কলামের উপর সীমানায় দখলদার নামে একটি কলাম আছে। যা অন্য কোনো খতিয়ানে থাকে না। অনেক সময় দেখা যায়, আরএস খতিয়ানের ফরমে পিএস খতিয়ান লেখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে 'উত্তর সীমানার দখলকার' এর ঘরটি খালি থাকে না। কিম্বা এ কলামটি কেটে দেয়া থাকে।

আরএস খতিয়ানের নমুনা

খতিয়ান পরিচিতি

১০। অনেক আরএস খতিয়ানের 'স্বত্বের বিবরণ ও দখলকার তথা জমির মালিক এ. খ, গ, ঘ, ও ইত্যাদি গ্রুপে ভাগ করা থাকে। খতিয়ানের ২য় পৃষ্ঠার নিচের অঙ্কে অধীনস্থ স্বত্বের খাজনা প্রাপকের খতিয়ান নম্বর (মায় বাটা) কলামে যে গ্রুপের নাম থাকে এবং তার পাশের কলামে অর্থাৎ 'অধীনস্থা' স্বত্বের বিভিন্ন খতিয়ানের নম্বর গুলামে যে পরিমাণ শতক লেখা থাকে, বুঝতে হবে ঐ গ্রুপের পরিমাণ বন্ধক ইত্যাদি। এক্ষেত্রে খতিয়ানের হিস্যা বণ্টনের সময় সর্বমোট সম্পত্তিকে ধরতে হবে 'নিজ দখলীয় জমির মোট পরিমাণ'কে নয়।

সিএস জরিপ আগে না আরএস জরিপ আগে?

জরিপ ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশের পৃথক পৃথক জায়গায় সিএস ও আরএস জরিপ পরিচালিত হয়। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক: ১৯২৪ হতে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জিলায় যখন আরএস জরিপ চলছিল তখনই ১৯৪০ সালের দিকে দিনাজপুরে সিএস জরিপ শেষ হয়।

তবে যেসব স্থানে আরএস জরিপ পরিচালিত হয় সেসব স্থানে অনেক আগেই সিএস জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। যেমন- চট্টগ্রাম জিলায় সিএস জরিপ সম্পন্ন হয়েছে ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৮ এর মধ্যে। আর ঐ এলাকায় আরএস জরিপ সম্পন্ন হয়েছে ১৯২৪ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যে। সুতরাং সিএস জরিপ আগে এবং আরএস জরিপ পরে।

এক নজরে জরিপকাল

সিএস জরিপ }- ১৮৮৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে

ডিএস জরিপ 

আরএস জরিপ এসএস জরিপ পিএস জরিপ বিএস জরিপ ঢাকা সিটি জরিপ

১৯২৪ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যে

}- ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে

১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ চলমান

এসএ জরিপ/খতিয়ান (State Acquisition Survey/Khatian) ১৯৫৬-১৯৬৫ খ্রি.

এসএ খতিয়ান জরিপ বা পিএস জরিপ/খতিয়ান (Pakistan Survey/ Khatian) ১৯৫৬-১৯৬৫ খ্রি.: ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন (Suite acquisition and tenancy Act, 1950) দ্বারা জমিদারী প্রথা বিলোপ করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৭, ১৮ এবং ১৯ ধারার বিধান মতে এক নতুন খতিয়ান সৃজন করে। তার নাম দেয়া হয় এসএ খতিয়ান।

এসএ জরিপ কালিন সময়কাল। ১৯৫৬-১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ

এসএ জরিপের পরিচালনা পদ্ধতি। এক্ষেত্রে সাধারণত কোনো নতুন নকশা তৈরি হয়নি। কেবলমাত্র বিতর্কিত সুনির্দিষ্ট স্থানে নকশা প্রণয়ন করা হয়।এ জরিপের উল্লেখযোগ্য দিক।

প্রথমত, কিস্তোয়ার আদলে সিলেট জিলায় জরিপ কার্য পরিচালিত হয়। এবং নরু ম্যাপ তৈরি হয়

দ্বিতীয়ত, সরেজমিনে ঢাকা শহরের ম্যাপ তৈরি হয়।

সাক্ষ্যগত মূল্য: ১৯৬২ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দিন হোসেনের নেতৃত্বে সরকার ১টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ তদন্তে এসএ জরিপে বিস্তর ভুলত্রুটি ধরা পড়ে। ভুলত্রুণী থাকার কারণে এসএ খতিয়ানের সাক্ষ্যগত মূল্য প্রদান করা হয়নি।

পিএস খতিয়ান জরিপ। এই জরিপ পাকিস্তান আমলে হয়েছে বিধায় একে পিএম জারিণ খতিয়ান বলা হয়।

এসএ/পিএস খতিয়ান/পর্চা চেনার সহজ উপায়:

১। এ খতিয়ানের নীচে বাম কোণে ৪৯/৫০/৫১/৫২/৫৩ ধারামতে লেখা থাকে।

২। এই পর্চা ডানে বামে আড়াআড়ি থাকে।

৩। প্রথম পৃষ্ঠার উপরে জেলা, মৌজা এবং খতিয়ান নং লেখা থাকে। তবে এ খতিয়ান নং এর উপরে আরো একটি খতিয়ান নং লেখা থাকে, এ নাম্বারটিকে সাবেক খতিয়ান নাম্বার বলে।

৪। এই পর্চা প্রায়ই হস্তলিখিত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অংশীদারদের অংশ আলাদা আলাদা ভাবে নির্ধারণ করা হয়নি।

৫। এই পর্চার সর্বশেষে মন্তব্য কলামের পাশে রাজস্ব কলাম অবস্থান করে।

৬। কেবলমাত্র ঢাকা ও আশেপাশের কিছু এলাকায় এই পর্চা প্রিন্টেড পাওয়া যায়।

৭। এই পর্চার সর্ববামে সাবেক খতিয়ান ও এর নিচে হাল খতিয়ান যেমন-

সাবেক খতিয়ান হাল খতিয়ান এভাবে লেখা থাকে।

৮। এস.এ জরীপে আলাদা কোনো ম্যাশ তৈরি না হওয়ায় প্রায়ই সি.এস ও এস.এ দাগ নম্বর একই পাওয়া যায়।

বিএস জরিপ/খতিয়ান (Bangladesh Survey) ১৯৭০-১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ

বাংলাদেশ নার্ভেকে সংক্ষেপে বিএস খতিয়ান (জরিপ) বলে। ১৯৭০ সালে টেস্ট একুইজিশন এন্ড টেনেন্সি এ্যাক্ট ১৯৫০ অনুসারে ১৯৭০ সাল হতে ১৯৯০ সালের মধ্যে এই জরিপ কার্য পরিচালিত হয়। ১৯৮৫ সালে এই জরিপের সাঁট প্রস্তুত করা হয়। সেটেলমেন্ট অফিসার এবং সুপারেন্টেনডেন্ট অব সার্ভে ছিলেন এম. এ. কাদের মিয়া গং।

নামকরণ। মূলত এটা রিভিশনাল সার্ভে হবে কোথাও কোথাও একে আরএস, বিএস হাল জরিপ ও আরবিএস জরিপ নামে অভিহিত করা হয়।

ঢাকা সিটি জরিপ

ঢাকা সিটি জরিপ। শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীর এলাকা নিয়ে এ জরিপ কার্য পরিচালিত হয় বলে, এর নাম ঢাকা সিটি জরিপ। এটি মূলত বিএস জরিপের নগর সংস্করণ।

ঢাকা সিটি জরিপকালীন সময়কাল। ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থ বছরে এই জরিপ প্রকন্দ্র চালু হয়েছে। বর্তমানে জরিপ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়।

ঢাকা সিটি জরিপের পরিচালনা পদ্ধতি:

এই জরিপ প্রায়ই কিস্তোয়ার এবং কিছু কিছু জায়গায় আর,এস, ব্লু-প্রিন্ট শিটের উপর করা হয়েছে। এই জরিপ এবং বিএস জরিপ প্রায় একই চরিত্রের। এই জরিপ ৮০= ১ মাইল হিসাবে করা হয়েছে।

বি.এস জরিপ/ঢাকা সিটি জরীপে পর্চা চেনার উপায়:

১। এ খতিয়ান ডানে বামে লম্বা এবং উপরে নিচে খাটো।

২। এ খতিয়ানের এক পৃষ্ঠাতেই সবগুলো কলাম দেয়া আছে।

৩। এ খতিয়ানের ১নং কলামের মালিক ও ঠিকানা লেখা থাকে।

৪। দখল বিবরণ ও মন্তব্য শেষ কলামে লেখা থাকে।

৫। এই জরীপের পর্চা ১ পৃষ্ঠা এবং অনুভূমিকভাবে (Horizoutally) শতভাগ প্রিন্টেট।

৬। এতে প্রত্যেক অংশদারের হিস্যা অংশ আলাদাআলাদা ভাবে উল্লেখ আছে।

৭। এতে অংশ কলামে হাজার (০.০০০) পদ্ধতি হিসাবে ষোল আনার ১.০০০ লেখা আছে।

৮। এই পদ্ধতিতে জমির পরিমাণ অযুতাংশ (০.০০০০) পদ্ধতিতে লেখা হয়েছে।

৯। বিএস খতিয়ানের উপর বিএস খতিয়ান এবং ঢাকা মহানগরীর ক্ষেত্রে আলাদা শিটে ঢাকা সিটি জরিপ কথাটি লেখা আছে। 


ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url