জমির দলিল হারিয়ে গেলে কী করবেন?

জমির দলিল হারিয়ে গেলে কি করবেন

জমির দলিল একটি মূল্যবান সম্পদ । অনেক সময় চুরি ডাকাতি হয়, বন্যা-ঘূর্ণিঝড় সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বাড়িতে আগুন লাগার মত বিভিন্ন অস্বাভাবিক কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান কাগজপত্রাদি হারিয়ে যায়, তাদের মধ্যে জমির দলিল একটি অন্যতম মূল্যবান। 

বাংলাদেশে এমন অনেক পরিবার হয়রানির শিকার হয়েছেন মূল্যবান দলিল হারানোর ফলে । এমন কি জমির মালিকানা হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয় দলিল খুঁজে পাওয়া না গেলে ।  

অন্য যেকোনো প্রকার মূল্যবান কাগজপত্র হারিয়ে গেলে তার জন্য ব্যক্তি নিজে একা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সেটা সংগ্রহের বিভিন্ন মাধ্যম থাকে। কিন্তু দলিল হারিয়ে গেলে যদিও তার বিকল্প ব্যবস্থা ও সমাধান এর উপায় আছে । কিন্তু মূল দলিল পাওয়া যাবেনা । 

জমি ক্রয়ের পর তা মালিকানা প্রমাণের একমাত্র মাধ্যম হলো দলিল । জমির দলিল হারিয়ে আপনি কতটা বেকায়দায় পড়তে পারেন, সেটা কেবল দলিল হারানো ব্যক্তিই বলতে পারেন।

দলিল কিভাবে নিরাপদে সংগ্রহ করে রাখবেন?

আধুনিক যুগে বিভিন্ন উপায়ে নিরাপদে দলিল সংগ্রহ করে রাখতে পারেন । দলিল এর কয়েক কপি ফটোকপি করে বিভিন্ন জায়গায় রাখতে পারেন, আবার এখন ডিজিটাল ফরম্যাটেও দলিল সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন যেমন, স্ক্যান করে ইমেইলে একটা কপি রেখে দিবেন, গুগল ড্রাইভে রেখে দিবেন যাতে ভবিষ্যতে মূল দলিল হারিয়ে গেলেও ফটোকপি বা ইমেইল থেকে পুনরায় পুনরুদ্ধার করতে পারেন।

মূল দলিল হারিয়ে গেলে কি করতে হবে ? 

যারা ইতিমধ্যে দলিল হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের করণীয় কি? প্রথমেই আপনাকে নিকটবর্তী থানায় একটি জিডি (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বা এনসিআর (নন-কগনিজেবল রিপোর্ট) দায়ের করতে হবে। এফআইআর নথিভুক্ত হলে পুলিশ আপনার দলিল খোঁজার চেষ্টা করবে। যদি সেটা জিডি দায়ের করার পর পুলিশের পক্ষে দলিল বের করে দেয়া সম্ভব না হয় তাহলে সরাসরি আপনাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল তুলতে হবে । 

অনেকেই আছেন দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে দিনের পর দিন হয়রানীর শিকার হয়ে থাকেন। তাদের জন্য বলছি, দলিল হারিয়ে গেলে আপনি নিজেই দলিল পাওয়ার একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন। 

দলিল কিভাবে তুলবেন? 

দলিল যেখানেই প্রস্তুত হোক না কেন দলিল রেজিস্ট্রি হয় আপনার উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য দলিল সম্পাদন আপনার বাড়িতে বা কোন দলিল লেখকের অফিসেও করতে পারি। কিন্তু দলিলটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ঐ জমিটি যে উপজেলায় অবস্থিত সেই উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে।
আপনি এক উপজেলায় বসে অন্য উপজেলার জমির হস্তান্তর সম্পাদন করলেও রেজিস্ট্রেশন কিন্তু করা হবে জমি যে উপজেলার সেই উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার। অর্থাৎ, দলিলের জন্ম হয় উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। 

এখন ধরুন- আপনার দলিলের দাতা, গ্রহীতার নাম, দাগ, খতিয়ান নম্বর এবং দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ বা দলিল নাম্বার যদি মনে থাকে তাহলে ১৫০০/- টাকা থেকে ২০০০/- টাকার মধ্যেই আপনার দলিলের নকলকপি তুলতে পারবেন আর এই নকলকপি দিয়েই নামজারী থেকে শুরু করে আপনার যাবতীয় স্বত্ব ও মালিকানা বজায় রাখতে পারবেন । 

যদি দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ বা দলিল নাম্বার কিছুই মনে না থাকে তাহলে, আপনি উক্ত সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দাতা, গ্রহীতার নাম, দাগ, খতিয়ান নম্বর বা আপনার ধারণা অনুযায়ী কত সালে রেজিস্ট্রি হতে পারে এমন কয়েকটি সাল তল্লাশি দিলে পেয়ে যাবেন।

কিভাবে দলিল তল্লাশি দিবেন? 

প্রত্যেক উপজেলায় যেমন সাব রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে, তেমনি সবগুলো সাব রেজিস্ট্রি অফিস থাকে একটি জেলা রেজিস্ট্রেশন অফিসের অধীনে। আর উক্ত অফিসকে জেলা রেজিস্ট্রেশন অফিস তথা জেলা রেকর্ড রুম বলা হয়ে থাকে। আপনি নিকট অতীতের দলিল তল্লাশি দিবেন দলিল যে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। 
কিন্তু যদি দলিল সাব রেজিস্ট্রি অফিসে তল্লাশি দিয়েও না পেয়ে থাকেন অর্থাৎ আরও পুরনো দলিল, সেক্ষেত্রে আপনাকে যেতে হবে জেলা রেজিস্ট্রেশন অফিস তথা জেলা রেকর্ড রুমে যা সাধারণত জেলা প্রশাসকের অফিসের আশেপাশেই থাকে। আপনি সেখানে গিয়ে তল্লাশি দিলে অনেক পুরনো দলিলও পেয়ে যাবেন।
এবার আসুন দলিল তল্লাশি কিভাবে দিবেন। এটা আসলে আপনার কাজ না, এটা হচ্ছে রেকর্ড রুমের কর্মকর্তাদের কাজ। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে, দলিলের নাম্বার বা রেজিস্ট্রেশন তারিখ (দলিলের উপরে ডান পাশে দলিল নাম্বার থাকে আর মাঝামাঝি জায়গায় তারিখটা দেখতে পাবেন) যদি জানা থাকে, সেটা নির্ধারিত ফী সহ ওনাদেরকে প্রদান করা। বাকীটা ওনারা নিজ দায়িত্বে করে দিবেন। তবে, যদি আপনার দলিলের নাম্বার বা রেজিস্ট্রেশন তারিখ যদি জানা না থাকে তাহলে আপনাকে অন্তত দলিলের দাতা- গ্রহীতার নাম দিয়ে তল্লাশি দিলে হবে। 

আপনি যদি সেটাও প্রদান করতে না পারেন, তাহলে অনেক মুশকিল হবে দলিল খুঁজে পাওয়াটা। তারপরও জমিটি যে মৌজায় উপস্থিত সেই মৌজার নাম বা জমির দাগ নাম্বার দিয়ে তল্লাশি দিয়েও আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত দলিল পেতে পারেন। আশা করি, জমির দলিল হারিয়ে পেরেশানি না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ধীরস্থির ভাবে উপরোক্ত নিয়ম অনুসরণ করে তল্লাশি দিয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত দলিল খুঁজে পাবেন। একই উপায়ে আপনি চাইলে যেকোনো ব্যক্তির যেকোনো দলিল তল্লাশি দিয়ে উত্তোলন করতে পারেন।

দলিল তল্লাশির খরচ কেমন? 

সূচি বই তল্লাশি- প্রথম বছরের জন্য ২০/- টাকা করে আর পরবর্তী প্রতি বছরের জন্য ১৫/- টাকা করে ফী দিতে হবে। অর্থাৎ, আপনি যদি নির্দিষ্ট করে জানেন কোন বছর দলিল হয়েছে তাহলে আপনাকে ২০ টাকা ফী দিলেই হচ্ছে।
আর যদি আপনি নির্দিষ্ট করে একটা সাল না জানেন, তাহলে একাধিক সালের দলিল আপনাকে তল্লাশি দিতে হবে, তখন প্রথম বছরের জন্য ২০ টাকা করে আর পরবর্তী প্রতি বছরের জন্য ১৫/- টাকা করে ফী দিতে হবে। তাছাড়া বালাম বই তল্লাশির জন্যও প্রায় ১৫০/- টাকার মত প্রদান করতে হবে। 
তবে, দলিল তল্লাশির জন্য আপনাকে আবেদন কিন্তু সাব রেজিস্ট্রি অফিসেই করতে হবে। আশা করি, জমির দলিল হারিয়ে পেরেশানি না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ধীরস্থির ভাবে উপরোক্ত নিয়ম অনুসরণ করে তল্লাশি দিয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত দলিল খুঁজে পাবেন। একই উপায়ে আপনি চাইলে যেকোনো ব্যক্তির যেকোনো দলিল তল্লাশি দিয়ে উত্তোলন করতে পারেন।


ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url