ইসলামিক শরিয়া মোতাবেক সম্পত্তি বন্টন
ইসলামে নারীর জন্য পরিষ্কার ভাষায় পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে। পুরুষ এবং নারী উভয়েই পৈতৃক সম্পত্তির ন্যায্য অংশ লাভ করবে। এ ক্ষেত্রে সমাজে কিছু কুসংস্কার দেখা যায়।
যেমন অনেক সময় দেখা যায় বোন শ্বশুর বাড়িতে মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকে কিংবা ভাই থেকে বেশি সম্পদশালী হয়ে থাকেন। এখন বোন যদি মনে করে, বাবার সম্পত্তিতে আমার যে অধিকার আছে তা নেব না, এটা ভাইকে দিয়ে দেব; তাহলে ভাইয়ের জন্য সেই সম্পত্তি ভোগ করা হালাল হবে কী?
হ্যাঁ, বোন যদি বাবার সম্পত্তির অংশ খুশি মনে ভাইকে দেয়, তাহলে ভাইয়ের জন্য সেটা ভোগ করা হালাল বা জায়েজ। কিন্তু জটিলতা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের দেশের মেয়েরা বা বোনেরা বাবার বাড়ির সম্পত্তি আনেন না। প্রথম কারণ হলো তারা মনে করেন, বাবার বাড়ির সম্পত্তি আনলে তারা গরিব হয়ে যাবেন! দ্বিতীয় ধারণা হলো তারা মনে করেন, বাবার বাড়ির সম্পত্তি আনলে ভাইদের কাছে দাঁড়ানো অধিকার তাদের থাকবে না। বাবার বাড়ির সম্পত্তি নিলে যেন সে পর হয়ে যায়।
বাস্তবেও অনেক এলাকায় দেখা যায় বোন বা ফুফুরা যদি তাদের হক নিয়ে যায়, তাহলে তাদের বাবার বাড়ি আসা, বেড়ানোর অধিকার থাকে না। এটা ঠিক নয়। ইসলাম একে সমর্থন করে না। কারণ সম্পত্তির অংশ নেওয়া বোনের অধিকার।
পবিত্র কোরআনে এসেছে ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানের বিষয়ে আদেশ দিচ্ছেন। (তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদে)
এক ছেলের অংশ দুই মেয়ের অংশের সমান।
আর যদি সন্তান শুধুই মেয়ে হয়, তাহলে তারা একাধিক হলে পুরো সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ পাবে।
যদি এক মেয়ে থাকে, তাহলে সে পাবে পূর্ণ সম্পদের অর্ধেক।’ (সুরা নিসা : ১১)।
ভাইয়ের যেমন বাবার সম্পত্তি ভোগ করার অধিকার আছে, বোনেরও আছে। এই সম্পত্তি নেওয়ার কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবে কেন?
ভাইয়ের সঙ্গে বোনের যে রক্তের সম্পর্ক তা হক নিলেও থাকবে, না নিলেও থাকবে। বাবার সম্পত্তি যদি বোন নিয়ে যায় তার পরেও ভাইয়ের কর্তব্য হলো- বোনের দেখাশোনা করা, খোঁজখবর নেওয়া।
বোন যদি তার হক না নেয় তারপরেও ভাইয়ের কর্তব্য হলো, তার বোন কি কুসংস্কারের কারণে বা তার খোঁজখবর নেওয়া হবে না এ কারণে সম্পত্তি নিচ্ছে না! এটা জানা।
যদি এটাই হয় তাহলে বোনকে বোঝাতে হবে, ভাই হিসেবে তোমার প্রতি আমার যে দায়িত্ব এটা ক্ষুণ্ন হবে না। অতএব তুমি নির্ধিদ্বায় সম্পত্তি নিতে পার। এভাবে বলার পরও যদি বোন বাবার বাড়ির সম্পত্তি না নেয় তাহলে এটা ভাইয়ের জন্য ভোগ করা জায়েজ। অন্যথায় নয়।
উত্তরাধীকারিগণ কিভাবে সম্পত্তির অংশীদারী হবেন
(ক) স্বামী:- স্ত্রীর মৃত্যুর পর দুইভাবে স্বামী তার স্ত্রীর সম্পত্তির মালিক হবেন যথা-
১। যদি স্ত্রীর গর্ভ থেকে তার কোন ঔরষজাত সন্তানাদি না থাকে তাহলে মোট- সম্পত্তির অর্ধেক ১/২ অংশ পাবেন।
২। যদি স্ত্রীর গর্ভের তার কোন ঔরষজাত সন্তান থাকে তাহলে মোট- সম্পত্তির ১/৪ অংশ (এক চতুর্থাংশ) পাবেন।
(খ) পিতা:- সন্তানের মৃত্যুর পর পিতা তিন অবস্থায় তার মৃত সন্তানের সম্পত্তির মালিক হবেন।
যথাঃ-
১। মৃত সন্তানের যদি কোন পুত্র, পুত্রের পুত্র যতই নিম্নের হোক কোন পুরুষ থাকে থাকে তাহলে পিতা তার মৃত সন্তানের সম্পত্তির- ১/৬ অংশ পাবেন ।
২। যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র, পুত্রের পুত্র, তার নিম্নের কোন পুরুষ না থাকে, কিন্তু মৃত সন্তানের যদি কণ্যা, কন্যার কন্যা যতই নিম্নের হোক কোনো নারী থাকে তাহলে পিতা ১/৬ অংশ হিসাবে পাবেন ।
৩। আর যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তানাদি না থাকে তাহলে পিতা তার মৃত সন্তানের অবশিষ্ট সকল সম্পত্তির মালিক হবেন।
(গ) মাতাঃ মাতা- মৃত সন্তানের সম্পত্তি তিন অবস্থায় পেয়ে থাকেন
যথা-
১। মৃত সন্তানের যদি সন্তান থাকে অথবা একাধিক ভাই বোন থাকে তাহলে মোট সম্পত্তির ১/৬ অংশ মাতা পাবেন।
২। যদি মৃত ব্যাক্তির স্বামী বা স্ত্রীর সাথে পিতা মাতা উভয়ে থাকে তাহলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তির ১/৩ অংশ মাতা পাবেন ।
৩। মৃত ব্যাক্তির যদি কোনো সন্তান না থাকে, ভাই বোন ২ জনের কম থাকে এবং স্ত্রী কিংবা স্বামী জীবিত না থাকে তাহলে মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশ মাতা পাবেন ।
(ঘ) স্ত্রীর অংশ: স্ত্রী তার মৃত স্বামীর সম্পত্তি দুই অবস্থায় পেয়ে থাকেন
যথা:
১। যদি মৃত স্বামীর সন্তান না থাকে তাহলে ১/৪ অংশ পাবেন ।
২। যদি মৃত ব্যাক্তির সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবেন ।