নামজারি বা মিউটেশন এর নিয়ম ও প্রয়োগ
মিউটেশন বা নামজারি।
মিউটেশন (Mutation) ইংরেজি শব্দ। বাংলা অর্থ হলো নামজারি বা পরিবর্তন। এখানে খতিয়ানে নাম লেখন ভুক্ত করা বা জমাজমি ভাগ বা পরিবর্তনকে বুঝায়।
নামজারিকরণের ক্ষমতা
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর ২০ অনুচ্ছেদ বলে নামজারির দায়িত্ব সহকারী ভূমি কমিশনারের উপর ন্যাস্ত ।
নামজারির কারণ:
১। রেজিস্ট্রি দলিলগুলো জমি হস্তান্তরের কারণে।
২। ভূমি মালিকের মৃত্যুর কারণে।
৩. সরকার কর্তৃক খাস জমি বন্দোবস্তের কারণে;
৪। কবলা, উপহার ও উইল এর ক্ষেত্রে নামজারি।
৫। সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে নামজারি।
৬। খাস খতিয়ানভুক্তকরণের ফলে নামজারি।
৭। এল এ কেসের আওতায় নামজারি।
৮। স্বত্ব মামলায় রায় ডিক্রির মূলে নামজারি।
৯। খাজনা অনাদায়ে জমি বিক্রি ও তৎসংশ্লিষ্ট নামজারি;
১০। নদী সিকস্তির কারণে খাজনা মওকুফ করা হলে।
১১। সার্টিফিকেট মামলা ও কোর্টে মামলার মাধ্যমে কোনো জমি নিলাম খরিদ হলেও স্বত্বাধিকার ঘোষিত হলে নামজারির প্রয়োজন হয়।
নামজারির প্রকারভেদ:
১। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারি।
কোনো হোল্ডিংয়ের মালিকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকারীগণ নিজেদের নাম ঐ হোল্ডিংভুক্ত করার আবেদন করবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তহসিলদারের প্রতিবেদন পাবার পর যথাযথ শুনানী ও কাগজপত্র যাচাই শেষে নামজারির আবেদন দিবেন। এ ক্ষেত্রে নতুন কোনো হোল্ডিং না খুলে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন করে ফারায়েজ অনুযায়ী হিস্যা বণ্টন করে উত্তরাধিকারীদের নাম পূর্বের হোল্ডিংভুক্ত করবেন।
২। রেজিস্ট্রার দলিলমূলে নামজারি:
দলিল রেজিস্ট্রির পর রেজিস্ট্রি অফিস হতে হস্তান্তর নোটিশ (এলটি নোটিশ) সহকারী এয়শন (ভূমি) এর কার্যালয়ে পাঠাতে হয়। উক্ত নোটিশ পাবার পর সহকারী কমিশন (ভূমি) এর অফিসে একটি নামজারি কেস নথি খুলে তা তদন্তের জন্য তহসিল অফিসে পাঠাবেন। এরমবন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরেজমিনে ঐ রেকর্ড যাচাই করে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল এর পরিশিষ্ট-১৩ অনুসারে ফরম এবং ১০৭৮ এ প্রতিবেদন দিবেন।
৩। আদালতের ডিক্রিমূলে নামজারি:
আদালতের ডিক্রি মূলে সরকারি খাস জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নামজারি না যায়। এরূপ ডিক্রির পর উক্ত জমি পুনরায় রেজিস্ট্রির প্রয়োজন হয় না। (অনু-৩২১ ভূঃ যামান) তবে এরূপ ডিক্রি মূলে প্রাপ্ত খাস জমির নামজারির আবেদন পাওয়া গেলে একটি নামজারি মোকদ্দমা চালু করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মতামতের জন্য তা কালেক্টরের নিকট প্রেরণ করতে হবে ডিক্রি একতরফা বা দু'তরফা যাই হোক। কালেক্টর বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এরূপ প্রস্তাব পাবার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১১-৫-১৯৯৪ ইং তারিখের নং ভূঃ মাঃ/ শঃ- ৯-১৯৯৩/২১৪ বাবদ স্মারক এর বিধান মতে উক্ত ডিক্রি রদের জনা দেওয়ানি আদালতে বিবিধ কেস/ আপিল / ফ্রেস স্যুট দায়ের করার ব্যবস্থা করবেন। দেওয়ানি আদালতে রায়ে সরকারি স্বার্থ রক্ষা না হলে নামজারির আবেদন নিষ্পত্তির পূর্বে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ করতে হবে। জেলা প্রশাসকের মতামতের পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরূপ নথি নিষ্পত্তি করবেন।
৪। অধিগ্রহণকৃত জমি নামজারি:
কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান জমি অধিগ্রহণ করলে তারাই ঐ জমির নামজারির জন্য আবেদন করবেন। প্রত্যাশী সংস্থা নামজারির আবেদন না করলে কালেক্টরের এলএ শাখা হতে অধিগ্রহণ (এলএ) কেসের নম্বর ও তফসিল সংগ্রহ করে ঐ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজ নামে হোল্ডিং খোলার জন্য নোটিশ দিতে হবে। এলএ শাখারও দায়িত্ব এলএ কেসের নম্বরসহ অধিগ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য সহকারী কমিনার (ভূমি)র অফিসে প্রেরণ করা। যাতে সংস্থা হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে পারে।
৫। সার্টিফিকেটমূলে নামজারি:
সার্টিফিকেট মূলে কোনো স্থাবর সম্পত্তির নিলাম ক্রেতা নামজারির আবেদন করলে নিলামের বায়নানামা ও দখলনামার ভিত্তিতে নামজারি আবেদন মঞ্জুর করা যাবে। নিলাম ক্রেতা সরকার হলে। ও ii নং রেজিস্টার সংশোধন করতে হবে এবং viii নং রেজিস্টার এর ৩য় খণ্ড সংশোধন করতে হবে।
আবেদনকারীর করণীয়:
জমি ক্রয়ের পর ক্রেতার সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো ক্রীত জমি নিজ নামে নামজারি করে রেকর্ড সংশোধন করা, এ জন্য করণীয় হলো।
১। কোর্ট ফি দিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি)ও বরাবরে আবেদন করা।
২। আবেদনের সাথে জমির মালিকানা সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংযুক্ত করতে হবে!
৩। নামজারির জন্য ন্যূনতম ৪৫ দিন সময় হাতে নিয়ে আবেদন করা।
৪। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক নামজারির উপর শুনানীকালে নিজনামে হোল্ডিং নম্বর জেনে নেওয়া। জমির মূল কাগজপত্র নিয়ে হাজির হওয়া এবং শুনানীতে অংশ নেয়া।