পিএমশন মামলা কে করতে পারবেন?

পিএমশন মামলা কে করতে পারবেন

আপনারা সবাই জানেন জমির মালিক তার জমি বিক্রি করতে চাইলে প্রথমে অগ্রক্রয় অধিকারীদের বিক্রির খবর জানাতে হয়। যদি তারা ক্রয়ে আগ্রহী না হয় তখন বিক্রেতা বাইরের পার্টির কাছে জমি বিক্রি করতে পারবেন। বিক্রির খবর বা নোটিশ না দিয়ে বিক্রেতা জমিটি বাইরের লোকের কাছে বিক্রি করে দিলে প্রথমে ওই জমির ওয়ারিশ সূত্রে সহঅংশীদার, দ্বিতীয়ত ক্রয়সূত্রে যারা সহঅংশীদার এই দুই শেণীর ব্যক্তিরা আদালতে অগ্রক্রয়ের মামলা দায়েরের মাধ্যমে পুনঃক্রয় করে নিতে পারবেন।

এই মামলা কে করতে পারবেন, আর কে করতে পারবেন না, কত টাকা কিভাবে জমা দিয়ে মামলাটি করতে হয়, টাকা জমা না দিয়েও মামলাটি করার উপায় কী, কোন শ্রেণীর জমির ক্ষেত্রে প্রিয়েমশন করা যাবে না, এ মামলাটি কত সময়ের মধ্যে করতে হয়, মামলাটি শেষ হতে কত সময় লাগে, জমির আগ্রহী ক্রেতাকে কত টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, মামলায় হেরে গেলে আপিলের বিধান কী যাবতীয় প্রশ্নোত্তর নিয়ে আজকের নিবন্ধ।

কোন বাইরের পার্টির প্রবেশ ঠেকানোর জন্য এ ধরনের অধিকার আইনে বলবৎ আছে। কৃষিজমি ও অকৃষি উভয় প্রকারের জমির অগ্রক্রয় দাবি করে আদালতে মামলা করা যায়। মহানগরী এলাকা, পৌরসভা এলাকা, হাটবাজার ইত্যাদিকে অকৃষি জমি হিসেবে গণ্য করা হয়। কৃষিজমির অগ্রক্রয়ের ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৯৬ ধারা এবং অকৃষি জমির অগ্রক্রয়ের ক্ষেত্রে অকৃষি গুজারত্ব আইন-১৯৪৯ এর ২৪ ধারা মতে মামলা দায়ের করতে হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব

আইন-১৯৫০ এর ৮৯ ধারা অনুযায়ী জমি রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে ৩ বছরের পর আর অগ্রক্রয় দাবি করে আর মামলা করা যাবে না।

বিক্রীত জমির সাব কবলা দলিলে উল্লেখিত মূল্যমান অনুযায়ী আর্থিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলা দায়ের করতে হলে আদালতে চার ধরনের টাকা জমা দিতে হয় অন্যথায় মামলাটি আদালত খারিজ করে দেবে।

১। সাব-কবলা দলিলে উল্লেখিত জমির মূল্য প্রদান করে।

২। উক্ত মূল্যের ওপর বার্ষিক ২৫% হারে ক্ষতিপূরণ বাবদ।

৩। উক্ত মূল্যের বার্ষিক সরল সুদে ৮% হারে।

(মনে রাখবেন ২ এবং ৩নং হিসাব করতে হবে দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে মামলা দায়েরের সময় পর্যন্ত)

৪। প্রথম ক্রেতা কর্তৃক উন্নয়ন বাবদ অন্যান্য টাকা, যা পরবর্তীতে আদালত সমীচীন মনে করলে জমা দিতে নির্দেশ দেবেন।

মনে রাখা দরকার কোন বসতভিটা বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষি কিংবা অকৃষি জমির অগ্রক্রয় মামলা চলবে না। আর মুসলিম আইনে তিন শ্রেণীর লোক অগ্রক্রয় দাবি করে মামলা করতে পারেন।

১। উত্তরাধিকার বা ক্রয় সূত্রে সহঅংশীদার।

২। যে জমির মধ্য দিয়ে বা সংলগ্ন পথ, পানির ড্রেন যাদের রয়েছে।

৩। সংলগ্ন জমির মালিক।

মনে রাখবেন মুসলিম আইনে মামলা করতে আগে টাকা জমা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। মামলার রায় হওয়ার পর টাকা জমা দিতে হয়।

অগ্রক্রয়ের মামলা চলে না, যদি- 

১। বিক্রীত জমি বসতবাড়ি হয়, 

২। অগ্রক্রয়ের মামলা দায়ের করার আগে বিক্রীত জমি বিক্রেতার কাছে হস্তান্তরিত হয়, 

৩। উক্ত বিক্রয় যোগসাজশি বা হস্তান্তরিত হয়, 

৩। উক্ত বিক্রয় যোগসাজশি বা  জাল বিবেচিত হয়, 

৪। বিনিময় বা ভাগবাটোয়ারা সংক্রান্ত সম্পত্তি হস্তান্তর হয়, 

৫। স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীর বরাবরে উইল বা দানমূলে সম্পত্তি হস্তান্তর করে, 

৬। হেবা-বিল-এওয়াজ মূলে হস্তান্তর করলে, 

৭। রক্তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তিন পুরুষের কোনো দান বা উইল মূলে হস্তান্তর করে, 

৮। মুসলিম আইনে ওয়াকফ এবং ধর্মীয় কারণে বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত হস্তান্তরে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে এবং শুনানি শেষে আবেদনকারীকে জমি কেনার অধিকার দিতে পারেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জমা দেয়া টাকা থেকে ক্রেতাকে তার পাওনা টাকা পরিশোধ করতে আদেশ দেবেন। 

যার আবেদন মঞ্জুর করা হলো তার বরাবর ৬০ দিনের মধ্যে বিক্রয় দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেবেন। তবে এ রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনো কর, ডিউটি বা ফিস দিতে হবে না। ৬০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি করে দিতে ব্যর্থ হলে এর পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে আদালত সাফ-বলা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেবেন পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে আদালত সাফ-কবলা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেবেন। 

এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে আইনে। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০-এর ৯৬ (১২) ধারা অনুযায়ী আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে একবার আপিল করা যাবে; কিন্তু ওই আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আর দ্বিতীয় আপিল করা যাবে না। তবে প্রথম আপিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির ১১৫ ধারা অনুযায়ী রিভিশন দায়ের করা যায়।


ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url