বাংলাদেশ জুলাই বিপ্লব ২০২৪ আন্দোলনের বিবরণ
বাংলাদেশের ঘটে যাওয়া "জুলাই বিপ্লব ২০২৪" একটি উল্লেখযোগ্য গণ-আন্দোলন, যা মূলত ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়।
এটি প্রথমত কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হলেও দ্রুত ফ্যাসিবাদী শাসন ও সরকারের বিভিন্ন বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে জনরোষে রূপ নেয়। আন্দোলনের মূল উদ্দীপনা ছিল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা, যা ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বিতর্কিত মন্তব্যের পর আরও তীব্র হয়।
আন্দোলনের অন্যতম চূড়ান্ত মুহূর্ত ছিল ১৬ জুলাই ২০২৪ সালে, যখন পুলিশের গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড একটি গুরুতর ইস্যু হয়ে উঠেছে।
এর ফলে সারা দেশে প্রতিবাদের ঢল নামে। শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ, আইনজীবী, ও বুদ্ধিজীবীরা একত্রে এই আন্দোলনে অংশ নেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময়, ১৬ জুলাই পুলিশি হস্তক্ষেপে আবু সাঈদ গুরুতরভাবে আহত হন এবং পরে মারা যান। এ ঘটনার পর পুলিশ এবং সাঈদের পরিবার পৃথক দুটি মামলা করে। আদালত এই দুটি মামলার তদন্ত একসঙ্গে করার নির্দেশ দিয়েছে এবং তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পিবিআইকে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, আন্দোলনের সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। পরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন বলে অভিযোগ ওঠে।
ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশ সদস্য ও কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া, মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার ভূমিকাও উঠে এসেছে
বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব ২০২৪ ছিল ছাত্র–জনতার একটি ঐতিহাসিক গণআন্দোলন। এটি মূলত কোটা সংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে শুরু হলেও দ্রুত মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বৃহত্তর লড়াইয়ে রূপ নেয়।
আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে, যেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে "রাজাকারদের বংশধর" বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এই মন্তব্য তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, যা সারা দেশে ছাত্রসমাজের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং মিছিল হলেও, ১৫ জুলাই থেকে সরকারি দমননীতি, পুলিশি নির্যাতন, এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সহিংস হামলা আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ জুলাই থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ এবং কারফিউ জারি করেও আন্দোলন থামানো যায়নি।
আন্তর্জাতিক মহল এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিবর্তনের একটি দিক নির্দেশক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্দোলনের ফলে তরুণ সমাজের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক চেতনার উদ্ভব ঘটেছে।
এই সংগ্রাম শুধুমাত্র সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদী ঐক্য চত্বর এই আন্দোলনের স্থায়ী স্মারক হিসেবে কাজ করবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
সরকারের দমনপীড়ন ও সহিংসতা সত্ত্বেও এই আন্দোলন ৫ই আগস্টের শাসকগোষ্ঠীর পতনের মাধ্যমে শেষ হয়, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে ।